প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার বিতরণ

বিজয়ী দুই লেখকের হাতে ১৪২২ বাংলা বছরের ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার’ তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জমে উঠেছিল লেখক, প্রকাশক ও সাহিত্য-অনুরাগীদের প্রীতিসমাবেশ।

পুরস্কার কারা পাচ্ছেন, তা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। মননশীল শাখায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা’ গবেষণাগ্রন্থের জন্য সৈয়দ আবুল মকসুদকে নির্বাচন করেছিলেন বিচারকমণ্ডলী। আর সৃজনশীল শাখায় ‘খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক’ গল্পসংকলনের জন্য বিজয়ী ফয়জুল ইসলাম। বই দুটির প্রকাশক যথাক্রমে প্রথমা প্রকাশন ও সমগ্র প্রকাশন।
অনুষ্ঠানে দুই লেখকের হাতে ক্রেস্ট, প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক ও অভিজ্ঞানপত্র তুলে দেওয়া হয়। পরিয়ে দেওয়া হয় উত্তরীয়।
কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। তিনিই সঞ্চালনা করেন অনুষ্ঠানটি। সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘এটি কোনো আড়ম্বরের অনুষ্ঠান নয়, আন্তরিকতার অনুষ্ঠান। আমরা নবীন কল্পনাকে উদ্‌যাপন করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, এবার ত্রয়োদশবারের মতো এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বাংলা বছরে দেশের ভেতরে প্রকাশিত সৃজনশীল ও মননশীল বই থেকে দুটিকে বেছে নেওয়া হয়। বিচারকাজে বিচারকমণ্ডলী স্বাধীনভাবে সেরা দুটি বই নির্বাচন করেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলো কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করে না। এবারের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সদস্যরা হলেন আবুল মোমেন, মোহিত উল আলম, সোনিয়া নিশাত আমিন ও ফারুক মঈনউদ্দীন।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয় গত এক বছরে বিশিষ্ট তিন প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী ও রফিক আজাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, অভিনয়শিল্পী ও আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং আফজাল হোসেন তিন কবির দুটি করে কবিতা আবৃত্তি করেন। অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী পড়ে শোনান সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যকর্ম থেকে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুরস্কারের উপযোগিতা শুধু লেখকের জন্য নয়। সাহিত্যের জন্যও জরুরি। লেখক এর মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে পারেন তাঁর সাহিত্যকর্ম কীভাবে গৃহীত হচ্ছে। তিনি এ পুরস্কার আয়োজনের জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানান।
এরপর বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার পালা। শুরুতে সৃজনশীল শাখার বিজয়ী ফয়জুল ইসলামের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তাঁর জন্য তৈরি অভিজ্ঞানপত্র পড়েন ফারুক মঈনউদ্দীন। অভিজ্ঞানপত্রে বলা হয়, ‘ফয়জুল ইসলামের গল্পের চরিত্রগুলোর মধ্যে যে জীবনবোধ লুক্কায়িত বা প্রকাশিত, তা ঈর্ষণীয় নিরাবেগ নির্লিপ্ততায় দক্ষ বয়নশিল্পীর মতো বুনে ফয়জুল ইসলাম সৃষ্টি করেন তাঁর গল্পের কাঠামো। সেই গল্পের কাহিনি ও চরিত্রের বাঁক পূর্বাভাসহীন নাটকীয়তায় ঋদ্ধ।’ ফয়জুল ইসলামকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সোনিয়া নিশাত আমিন। ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রতিক্রিয়ায় ফয়জুল ইসলাম বলেন, লেখালেখি একটি নিভৃত প্রক্রিয়া। সে প্রক্রিয়ায় যথাযথ মূল্যায়ন পাওয়া কঠিন। কিন্তু মানসম্পন্ন সাহিত্য পুরস্কার লেখককে নিভৃত অবস্থা থেকে বের করে আনে। লেখক জানতে পারেন তাঁর লেখা সম্পর্কে নির্মোহ মূল্যায়ন। তিনি আরও বলেন, ‘এ মূল্যায়ন আমি কাজে লাগাতে চাই। গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসাতে চাই না। এ পুরস্কার আমাকে নবজন্ম দিয়েছে বলেই মনে করি।’
সৈয়দ আবুল মকসুদের অভিজ্ঞানপত্র পড়েন আবুল মোমেন। অভিজ্ঞানপত্রে বলা হয়, ‘সৈয়দ আবুল মকসুদের শ্রমসাধ্য গবেষণার ফসল ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বইটি। এ বই লিখতে গিয়ে তাঁকে ঘাঁটতে হয়েছে অজস্র পুরোনো ও দুর্লভ নথিপত্র, নিতে হয়েছে বহু মানুষের সাক্ষাৎকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিচিত্র তথ্য তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের পটভূমিতে এ বইতে সন্নিবেশিত করেছেন।’ তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মোহিত উল আলম। ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রথম আলো বর্ষসেরা বই
প্রথম আলো বর্ষসেরা বই

প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ বইটি রচনার প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে নানা বিষয় তুলে ধরেন। কথা প্রসঙ্গে বলেন, প্রথমবার কম্পোজ করার পর নিজের ভুলে কীভাবে পুরো লেখাটিই হারিয়ে যায়। আবার লিখতে হয় নতুন করে। তিনি আরও বলেন, দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, মেধা-মননের বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অবিস্মরণীয়। একটি জাতি বা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা মাথায় রেখেই এর ইতিহাস লেখায় তাঁর আগ্রহের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, বইটির আরেকটি খণ্ড শিগগিরই প্রকাশ হবে।
এরপর প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক মঞ্চে এসে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে শীতের সন্ধ্যাটি উষ্ণ হয়েছে। সবার উপস্থিতিই প্রমাণ করে, সাহিত্য অঙ্গনে এ পুরস্কার কতটা গ্রহণযোগ্য। আনিসুল হক আরও বলেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ ও ফয়জুল ইসলামকে পুরস্কৃত করে প্রথম আলো গৌরবান্বিত ও সম্মানিত হয়েছে।