শিক্ষক নেই জীববিজ্ঞানে, ৯টি বিভাগে আছেন একজন করে

বগুড়ার গাবতলী সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। শিক্ষকের ২২টি পদ থাকলেও ৫টি শূন্য রয়েছে। সেই হিসাবে এখন গড়ে ৮২ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন একজন।
কলেজটিতে দীর্ঘদিন ধরে জীববিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নেই; চলছে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে। মাত্র একজন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, দর্শন, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিত বিভাগ।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাবেয়া খাতুন বলে, শিক্ষক-সংকটের কারণে এখানে পাঠদান ব্যাহত হয়। এ কারণে বাইরে কোচিং করতে হয়।
কলেজ প্রশাসন সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালে সাড়ে ১২ বিঘা জায়গার ওপর গাবতলী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৩ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এটি সরকারীকরণের ঘোষণা দেন। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও মানবিকের দুটি করে বর্ষ মিলে প্রায় ১ হাজার ১০০ এবং স্নাতক (পাস) স্তরে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। বর্তমানে প্রভাষকের চারটি ও সহকারী অধ্যাপকের একটি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া প্রধান সহকারী, হিসাব সহকারী, প্রদর্শক ও শরীরচর্চা শিক্ষক ছাড়াও বিজ্ঞানাগারে তিনজন বেয়ারার পদ শূন্য। নেই বিজ্ঞানাগার, পাঠাগার ও পরিবহনের সুবিধা।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সূত্র জানায়, নানা সমস্যা ও সংকটের কারণে কলেজটিতে কোনো শিক্ষকই বেশি দিন থাকতে চান না। যোগদান করেই তাঁরা বদলির চেষ্টায় তদবির করেন।
বিএসএস প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জিনারুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই, বেঞ্চ নেই। গাদাগাদি করে বসতে হয়। শিক্ষকের সংকটে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। অধিকাংশ বিভাগে একজন করে শিক্ষক। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ক্লাস চললে আমাদের বসে থাকতে হয়।’
বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান বিভাগে দুটি বর্ষ মিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার শ। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে পালা করে পাঠদান করা হলেও প্রতিটি পালায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সোয়া দুই শ। অথচ বিজ্ঞান বিভাগের সব বিষয়েই শিক্ষকের পদ রয়েছে মাত্র একটি। একজন শিক্ষকের পক্ষে সোয়া দুই শ শিক্ষার্থীর পাঠদান সম্ভব হয় না। এর বাইরে ব্যবহারিক ক্লাসও নিতে হয়।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী স্টেশন সড়ক থেকে কলেজ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসে ফটক নেই।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা আকতার বলে, কলেজে মিলনায়তন নেই। অনুষ্ঠান হয় না। মেসে থেকে পড়াশোনা করতে হয়।
কলেজটির অধ্যক্ষ বিজয় শঙ্কর পাল বলেন, কলেজটি ১৯৯৩ সালে জাতীয়করণ করা হলেও নতুন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বেসরকারি অবস্থায় যে জনবল ছিল, তা দিয়েই চলছে কার্যক্রম। আটটি বিভাগে একজন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চিঠি চালাচালি চলছে। সংস্থাপন ও আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি এখন নিরীক্ষা কমিটিতে ঝুলে আছে। কলেজে নতুন একটি প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন এবং ছাত্রীদের জন্য আলাদাসহ শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করা দরকার।