নওয়াব ফয়জুন্নেসার বাড়ির পলেস্তারা খসে পড়ছে

বাড়িটির ভেতরে ঢুকতেই দক্ষিণ দুয়ারি দোতলা ভবন। পশ্চিম পাশে একতলা বৈঠকখানা। পুবে আরেকটি একতলা ভবন। মূল ভবনের পেছনে দোতলা রংমহল। কিন্তু সব কটি ভবনই এখন জরাজীর্ণ। পলেস্তারা খসে পড়েছে।
কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ডাকাতিয়া নদীর তীরে পশ্চিমগাঁও এলাকার এই বাড়িটি নওয়াব ফয়জুন্নেসার। তিনি ছিলেন উপমহাদেশের একমাত্র মুসলিম নারী নবাব। তাঁর বাড়িটি অযত্নে-অবহেলা পড়ে আছে। সংস্কার দরকার। কিন্তু তাঁর বংশধরদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, দোতলার ভবনের নিচতলাটি প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী। দোতলায় ১১টি কক্ষ রয়েছে। তিনটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে কয়েকজন কলেজছাত্র থাকে। দোতলাটির দক্ষিণ পাশে মেস করে থাকেন নওয়াব ফয়জুন্নেসার পঞ্চম বংশধর প্রয়াত সৈয়দ আজিজুল হকের স্ত্রী রেহানা হক ও সন্তানেরা। রেহানা হক বলেন, প্রতিদিন বহু মানুষ এই বাড়ি দেখতে আসেন। কিছু বখাটেও বাড়ির নিচে আড্ডা জমায়। বিরক্ত করে। এ ছাড়া বাড়ির পুব পাশের ফটকের সামনে প্রতিবেশী সৈয়দ আলী দেয়াল তুলেছেন।
রেহানা হক বলেন, ‘রংমহল মূলত বাড়ির নারীদের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের ভবন ছিল। নওয়াব ফয়জুন্নেসা সেখানে অনুষ্ঠান উপভোগ করতেন। নবাববাড়ির ঐতিহ্য আছে। কিন্তু আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। আমি পোস্ট অফিসে কাজ করি। ছোট মেয়েটা এমবিএ করেছে। এখন বদরুন্নেসা-ফয়জুন্নেসা বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন ক্লাস নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া ও মেয়র আবুল খায়ের এসেছিলেন। তাঁরা বাড়িটি সংস্কার করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।
এ বাড়ির মোতোয়ালি সৈয়দ মাসুদুল হক বলেন, ‘বাড়িটি সংস্কার করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। এটা আমরা সব সময় চাই।’
ইতিহাসবিদ ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা স্মারক গ্রন্থের লেখক গোলাম ফারুক বলেন, দেশের নারী মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম মহীয়সী নারী নওয়াব ফয়জুন্নেসা রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলিত। তাঁর সাহিত্যচর্চা, নারী শিক্ষার প্রসার, জনহিতকর কার্যক্রম, পত্রিকার প্রকাশনায় পৃষ্ঠপোষকতা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের বিষয়টি অন্তঃপুরেই রয়ে গেল। অথচ ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে মহারানি ভিক্টোরিয়া তাঁর কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘নওয়াব’ পদবি দিয়ে ভূষিত করেছিলেন।
গোলাম ফারুক বলেন, ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার হোমনাবাদ পরগনার (বর্তমানে লাকসাম উপজেলার) পশ্চিমগাঁও গ্রামে নওয়াব ফয়জুন্নেসার জন্ম। আহমেদ আলী চৌধুরী ও আরফুননেছার প্রথম কন্যা তিনি। ১৮৪৪ সালে বাবা ও ১৮৫৫ সালে তাঁর মা মারা যান। এরপর তিনি জমিদারি দেখাশোনা শুরু করেন। তিনি ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।