ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি ইটভাটায় বিক্রি

নওগাঁর রানীনগরে ফসলি জমিতে মেশিন দিয়ে এভাবেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
নওগাঁর রানীনগরে ফসলি জমিতে মেশিন দিয়ে এভাবেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় শ্রেণি পরিবর্তন করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর পুকুর খনন করার পর তোলা মাটি বিক্রি করা হচ্ছে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আছে। শ্রেণিভেদে প্রায় সব জমিতেই সারা বছরই কোনো না কোনো ফসলের আবাদ হয়। কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় এসব জমির মালিকেরা পুকুর ব্যবসায়ী ও ভাটার মালিকদের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে তাঁদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। মালিকেরা প্রতি বিঘা জমি বছরে ১২ হাজার টাকা দরে ১০ বছরের জন্য ইজারা দিচ্ছেন। ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আর পুকুরের মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী আত্রাই উপজেলার বান্দাইখারা গ্রামের রমজান আলীসহ সাত-আটজনভূমি আইন উপেক্ষা করে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করছেন। আর এসব পুকুরের উঁচু পাড়ের কারণে পাশের নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বোরো আবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাধ্য হয়েই কেউ কেউ পুকুর ব্যবসায়ীদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছেন। এতে শুধু চলতি মৌসুমেই প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন জমিতে নয়টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তবে মিরাট ইউনিয়নের আয়াপুর ও আতাইকুলা মৌজার ১ ও ২ নম্বর স্লুইসগেট এলাকায় পুকুর খননের প্রবণতা বেশি। রানীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোনিয়া বিনতে তাবিব বিষয়টি জানার পর কয়েক দিন আগে পুকুর খনন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমানকে নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ খননযন্ত্রের এক চালককে আটক করে। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

ইউএনও সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফসলি জমিতে পুকুর কাটতে নিষেধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। তিনি আরও বলেন, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। শ্রেণি পরিবর্তন করে ফসলি জমিতে পুকুর কাটা যাবে না।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষিজমির মাটি আর কাটা হবে না মর্মে মুচলেকা নিয়ে খননযন্ত্রের চালককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ী রমজান আলী বলেন, ‘আতাইকুলা মৌজার ২ নম্বর স্লুইসগেটের পাশে আমার তিন বিঘা জমি আছে। পাশের আরও ২১ বিঘা জমি প্রতিবছর ১২ হাজার টাকায় বিভিন্ন মালিকের কাছ থেকে ১০ বছর মেয়াদি ইজারা নিয়েছি। সেই জমির মাটি কেটে পুকুর বানাচ্ছি। এতে আইন অমান্য হওয়ার তো তেমন কিছু নেই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম গোলাম সারওয়ার বলেন, পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আতাইকুলা মৌজার বেশ কিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর খনন করতে নিষেধ করেছি। তবে কেউ মানছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাব।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর মিরাট ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’