সাটুরিয়ায় জরাজীর্ণ আশ্রয়ণ প্রকল্প ছাড়ছেন বাসিন্দারা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ গ্রামে মুন্নু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি বুধবার দুপুরে তোলা l প্রথম আলো
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ গ্রামে মুন্নু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাকগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি বুধবার দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার মুন্নু আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘর জরাজীর্ণ। শৌচাগার ও অগভীর নলকূপগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্প ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ভূমিহীনেরা।

বাসিন্দারা জানান, নির্মাণের শুরুতে আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে ৭০টি পরিবার বসবাস করত। নানা সমস্যার কারণে গত পাঁচ বছরে বেশির ভাগ পরিবার অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে দুর্ভোগ-কষ্ট সহ্য করে এ প্রকল্পে ১৬টি পরিবার বসবাস করছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে উপজেলার বরাইদ গ্রামে ১ দশমিক ৬৫ একর জমির ওপর সরকারি অর্থায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি চালু করা হয়। সে সময় বিএনপির দপ্তরহীন মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ হারুনার রশিদ খান মুন্নু এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করেন। এ কারণে তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় মুন্নু আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রকল্পে টিনের তৈরি সাতটি ব্যারাক আছে। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি করে ছোট কক্ষ আছে। একেকটি ভূমিহীন পরিবারকে একেকটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিশুদ্ধ পানির জন্য প্রতিটি ব্যারাকের বাসিন্দাদের একটি করে অগভীর নলকূপ (টিউবওয়েল) দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতি পাঁচটি পরিবারের জন্য দুটি শৌচাগার ও একটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়।

আশ্রয়ণের বাসিন্দারা জানান, নির্মাণের পর কোনো সংস্কার না করায় আশ্রয়ণের শৌচাগার ও টিউবওয়েলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বেশির ভাগ ব্যারাকের টিনের চাল মরিচা পড়ে ছিদ্র হয়ে গেছে। নিজেদের অর্থে এসবের কিছু মেরামত করে ১৬টি পরিবার কষ্ট করে বসবাস করছে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, সাতটি ব্যারাকের প্রায় সবগুলো কক্ষই জরাজীর্ণ। মরিচা পড়ে কক্ষের টিনগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ও শীতে কুয়াশা ঠেকাতে কেউ কেউ পলিথিন টাঙিয়েছেন। সাতটি টিউবওয়েলের মধ্যে পাঁচটি অকেজো হয়ে পড়েছে। পরে নিজেদের অর্থে দুটি টিউবওয়েল মেরামত করে ব্যবহার করছেন ৩ ও ৫ নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দারা। এ ছাড়া ১৪টি শৌচাগারের সবগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী। বাসিন্দাদের কেউ কেউ পলিথিন দিয়ে শৌচাগার তৈরি করে ব্যবহার করছেন।

২ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা উজালা বেগম (৫৫) বলেন, পাঁচ বছর আগে তাঁদের শৌচাগারটি ভেঙে গেছে। এরপর থেকে পলিথিন দিয়ে শৌচাগার বানিয়ে নিয়েছেন। ৬ নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দা মো. সোনামুদ্দিন (৬০) বলেন, ব্যারাকের চালের টিনে মরিচা পড়ে ছিদ্র হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির পানি ঠেকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘অন্য কোনোহানে (কোনোখানে) থাকার জায়গা নাই। আমাগো দেহারও কেউ নাই। নানা সমস্যায়ও এইহানে থাকছি।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পটির এসব সমস্যার বিষয় নিয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প অন্যতম। আশ্রয়ণটির সংস্কারে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলীকে দিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হবে। এরপর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সেই বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হবে।