ছোট হয়ে যাচ্ছে পল্টন ময়দান

ঢাকার গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের স্মারক এ ময়দানটি একসময় বিখ্যাত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক জনসভার জন্য। সেই ঐতিহাসিক ময়দানকে এখন আর চেনার উপায় নেই। পল্টন ময়দান আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনায়। এক চিলতে মাঠ ছাড়া এখানে আর কোনো খালি জায়গা নেই। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
ঢাকার গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের স্মারক এ ময়দানটি একসময় বিখ্যাত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক জনসভার জন্য। সেই ঐতিহাসিক ময়দানকে এখন আর চেনার উপায় নেই। পল্টন ময়দান আস্তে আস্তে ঢেকে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনায়। এক চিলতে মাঠ ছাড়া এখানে আর কোনো খালি জায়গা নেই। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

‘ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে’—মাইকে এখন আর এ রকম কোনো আহ্বান শোনা যায় না। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ঐতিহাসিক ময়দান এখন ছোট হতে হতে মধ্যম সারির মাঠ হয়ে গেছে পল্টন। এর পাশাপাশি একের পর এক স্থাপনা উঠছেই। সম্প্রতি যোগ হয়েছে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন কমপ্লেক্স।

রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামের মাঝখানে ছোট একটি মাঠের মতো। গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, মাঠের চারদিকে গ্রিলে রং করা হচ্ছে। মাঠে চলছে ক্রিকেটের অনুশীলন। মাঠের এক অংশে নির্মাণকাজের বিভিন্ন সামগ্রী রাখা। পাশেই তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। মাঠের চারদিকে হ্যান্ডবল, ভলিবল, বক্সিং, কাবাডিসহ বিভিন্ন ফেডারেশনের স্টেডিয়াম ও অফিস। মাঠটি এখন খেলা অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি একরকম বন্ধই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বলেন, মাঠে নিয়মিত মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। সব সময়ই মাদকসেবীদের আনাগোনা থাকে।

বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুসারে, ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পল্টন ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত তাঁর সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

পল্টন ময়দান নিয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এটা পাবলিক মিটিংয়ের জায়গা ছিল। সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা, বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে অনেক রাজনীতিকই এখানে সভা-সমাবেশ করেছিলেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন ছাত্রলীগের জয় বাংলা বাহিনী প্রথম পতাকা নিয়ে মার্চ করে। এ পল্টন ময়দানে সেদিন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট করে হাতে পতাকা তুলে দেন। জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই এখানে বড় পরিসরে জনসভা বন্ধ হয়ে যায়। পরে নব্বইয়ের দশকে জনসভা শুরু হলেও তা ছোট পরিসরে হতো। তিনি এ ঐতিহাসিক জায়গাটি সংরক্ষণের ব্যাপারে বলেন, স্মৃতির জন্য একটি স্থাপনার মতো কিছু করা যেতে পারে। যাঁরা এখানে সভা-সমাবেশ করেছেন, তাঁদের নিয়ে তথ্য লেখা থাকতে পারে।

পল্টন ময়দানটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, রোলার স্কেটিংয়ের জায়গাটিতে আগে গাড়ি পার্ক করা হতো। সেখানেই হচ্ছে ফেডারেশন। খেলাধুলার প্রয়োজনেই হচ্ছে। এখানে ভলিবল, কাবাডি, হ্যান্ডবলসহ অনেক খেলাধুলাই করা যাবে।

পল্টন মাঠের প্রশাসক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ। প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা মো. ইয়াহিয়া বলেন, এটি এখন মধ্যম সারির মাঠ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের খেলার উপযোগী। আগামী ১৮ তারিখ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের উদ্বোধন হবে। এ কারণে কিছু কাজ করা হয়েছে। 

মাদকের সমস্যা নিয়ে ইয়াহিয়া বললেন, ‘অল্প কিছু থাকতে পারে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর এটাকে গ্রিন জোন করার পরিকল্পনা আছে।’ ঐতিহাসিক ময়দানের অবশিষ্ট মাঠটুকু শেষ পর্যন্ত থাকবে নাকি আরও স্থাপনা তৈরি হবে জানতে চাইলে ইয়াহিয়া বলেন, সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন। তবে যতটুকু আছে তা হয়তো থাকবে।

বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহিম চেঙ্গিস আশির দশকে পল্টনে এসে হকি ও ফুটবল খেলার স্মৃতিচারণা করলেন। তিনি বলেন, এখানে আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব, টিকাটুলী ক্লাবসহ এলাকাভিত্তিক অনেক ক্লাব ছিল। জায়গাটির পরিচিতি ছিল ক্লাবপাড়া নামে। সময় ও বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গে সবই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সেভাবে পল্টনও ছোট হয়ে আসছে।