এবার বিছনাকান্দিতে মাটিধসে নিহত ৩

এবার সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দিতে গর্ত করে পাথর তোলার সময় মাটি ধসে তিন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। বিছনাকান্দির কুলুমছড়ায় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত তিনজনের লাশ পুলিশকে না জানিয়ে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায় তাঁদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার গোয়াইনঘাট পুলিশ বিষয়টি জানালে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশ তাঁদের লাশ উদ্ধার করে।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলা খুঁড়ে অবৈধভাবে পাথর তোলার সময় মাটিধসে পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। আহত হন তিনজন। পুলিশকে না জানিয়ে লাশ বাড়ি পাঠানো হলে দুদিন পর নেত্রকোনা থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ থানায় নয় পাথর ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে।
বিছনাকান্দিতে নিহত তিন পাথরশ্রমিক হলেন তোলা মিয়া (২৬), জাকির হোসেন (১৬) ও পরিমল সরকার (২৬)। জাকির সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গুলেরগাঁও গ্রামের নজির মিয়ার ও তোলা মিয়া ওয়াছির আলীর ছেলে। সম্পর্কে তাঁরা চাচা-ভাতিজা। পরিমল নেত্রকোনার কোনাগাঁওয়ের নির্মল সরকারের ছেলে।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে গতকাল সকালে তিন শ্রমিকের বাড়ির ঠিকানায় অনুসন্ধান চালিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাণহানির ঘটনা ধামাচাপা দিতেই পাথর ব্যবসায়ীরা লাশ বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান গোয়াইনঘাট থানা-পুলিশকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলনে শ্রমিক নিযুক্তকারী পাথর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার নির্দেশ দেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, কুলুমছড়ায় পাথর তোলার শতাধিক গর্ত রয়েছে। এগুলো থেকে পাথর তোলা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় বাছিত মিয়া ও কামাল মিয়া নামের দুই পাথর ব্যবসায়ী আরও পাথর তুলতে গর্ত গভীর করেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সেখানে অস্থায়ী বসতি করে শ্রমিকেরা কাজ শুরু করেন। বৃহস্পতিবার রাতের পালায় ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে গর্তে মাটি ধসে পড়ে। এতে তিন শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাতেই লাশ সরিয়ে ফেলা হয়।
তোলা মিয়ার বড় ভাই কটই মিয়া বলেন, তিনিও কুলুমছড়ায় কাজ করেন। তবে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় তোলা ও জাকির আরও কয়েকজনের সঙ্গে পাথর কোয়ারির বাছিত মিয়ার একটি গর্তে পাথর তোলার কাজ করছিলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন, তোলা ও জাকির মাটিচাপায় মারা গেছেন। তাঁদের লাশ সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তিনিও সুনামগঞ্জ চলে আসেন।
স্থানীয় রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন বলেন, কুলুমছড়ার যে গর্তে শ্রমিক নিহত হয়েছেন, সেটির মালিক বাছিত মিয়া ও কামাল মিয়া বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পাথর কোয়ারির নীতিমালা অনুযায়ী সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করতে ১০ মিটার গভীর গর্ত করার নির্দেশনা আছে। কিন্তু অবৈধ যন্ত্র দিয়ে পাথর তুলতে গভীর গর্ত করা হয়। এ ছাড়া রাতে পাথর তোলা নিষিদ্ধ হলেও কিছু অসাধু পাথর ব্যবসায়ী তা মানছেন না। বিছনাকান্দির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জের গুলেরগাঁওয়ে বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, নজির মিয়ার উঠানে নিহত জাকির ও তোলা মিয়ার লাশ রাখা। পাশে একটি ভাঙাচোরা ঘরে আহাজারি করছিলেন জাকিরের মা শাহানারা বেগম (৪৮)। তিনি বিলাপ করছিলেন, ‘ঘরের অভাব দূর করার লাগি পুত আমার বাড়ি থাকি বার অইছিল। আর ফিরল লাশ অইয়া।’
তোলা মিয়ার মা জায়মনা বিবি (৫৫) ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শয্যাশায়ী। জাকিরের চাচা ইয়াকুব আলী বলেন, জাকির ও তোলা মিয়া গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে সপ্তাহখানেক আগে বিছনাকান্দিতে কাজে যান। গ্রামে অন্যের জমি বর্গা চাষ করে সংসার চলে তাঁদের।