তিন জেলায় সেচের অভাবে বোরোর আবাদ ব্যাহত

নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরে কয়েক দিন ধরে পল্লী বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং চলছে। এ কারণে সেচ বিঘ্নিত হচ্ছে। পানির অভাবে ইরি-বোরোর কয়েক লাখ হেক্টর খেত শুকিয়ে যাচ্ছে। শিগগির সেচ দিতে না পারলে ধানের চারা শুকিয়ে মরে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি গৃহস্থালি কর্মকাণ্ড ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং চলছে বলে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেছেন। এ কারণে ইরি-বোরো খেতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে বেশির ভাগ খেত। কয়েকটি উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের গ্রাহকেরা প্রথম আলোর কাছে এ অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া এসএসসি পরীক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারছে না।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পল্লী বিদ্যুতের আওতায় ২ লাখ ৯ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার বাণিজ্যিক, সাড়ে ৮ হাজার বিদ্যুচ্চালিত সেচ পাম্প, দেড় হাজার ছোট-বড় শিল্পকারখানা ও অন্যরা সাধারণ গ্রাহক। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৫২ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ১৮ থেকে ২৫ মেগাওয়াট। এ কারণে দিনরাত লোডশেডিং হচ্ছে।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ সম্পন্ন করা হয়েছে। আরও কিছু জমিতে আবাদ চলছে।
এদিকে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঁচ-ছয়বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। বিদ্যুৎ থাকে মাত্র দুই ঘণ্টা। আবার রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটার মধ্যে বিদ্যুতের দেখা মিললেও একনাগাড়ে আধা ঘণ্টার বেশি থাকে না। দিনরাত মিলিয়ে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। উপজেলাটি নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) অধীন। এ উপজেলায় ১২ সহস্রাধিক গ্রাহক রয়েছেন। পল্লী বিদ্যুতের স্থানীয় অভিযোগকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরোয়ার জাহান বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে এ উপজেলায় অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে।
জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মজিবুর রহমান বলেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এদিকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে ৭০০ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, তাঁরা দিন-রাতে গড়ে তিন ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। পানির অভাবে ফেটে যাচ্ছে ধানের খেত।
নালিতাবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ অভিযোগকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলী বলেন, এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে দুই থেকে তিন মেগাওয়াট। এ কারণে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফ ইকবাল বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে বোরোর মৌসুম শুরু হয়েছে। এক-দুই সপ্তাহ সেচ সংকটের কারণে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না।
শেরপুর পবিসের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. মাসরুল হক খান বলেন, ‘আশা করি দু-এক দিনের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।’
জামালপুরের ছয় উপজেলায় সেচ সংকটে পড়েছেন অন্তত পাঁচ লাখ কৃষক। দু-তিন ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ এলেও ২৫-৩০ মিনিট থেকে আবার চলে যায়। তাঁরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। এ কারণে খেতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না। শিগগির খেতে পানি দিতে না পারলে ধানের চারা মরে যাবে।
জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জামালপুর সদর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, সরিষাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বোরো আবাদ ১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৩ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫ লাখ ১৮ হাজার ৯৪৬ জন কৃষক বোরোর আবাদ করছেন।
পবিসের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে বিদ্যুতের চাহিদা ৪৮ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৮ মেগাওয়াট।
জামালপুর পবিসের মহাব্যবস্থাপক পানা উল্লাহ বলেন, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের একটি ইউনিট মেরামত করা হচ্ছে ও অন্য দুটিতে গ্যাসের চাপ না থাকায় পুরো উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে এমন লোডশেডিং হচ্ছে। কত দিনের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে, তা তিনি জানেন না।