ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তি

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট যাত্রাপথে চলাচলকারী চারটি আন্তনগর ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য আসন কমানো হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার থেকে আরও দুটির আসনসংখ্যা কমানো হবে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এ রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয় এমন চারটি আন্তনগর ট্রেনের বরাদ্দ করা আসনসংখ্যা ১৪ জানুয়ারি কমানো হয়। এ ছাড়া আগামী মঙ্গলবার থেকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ও চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেসের আসনসংখ্যা কমানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকাগামী মহানগর গোধূলির শোভন শ্রেণিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য আসন বরাদ্দ ছিল ১৬৫টি। শোভন শ্রেণিকে শোভন চেয়ারে পরিবর্তন করে আসনসংখ্যা ১০০টি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির ১০টি আসনও বাতিল করা হয়েছে। ঢাকাগামী তূর্ণা-নিশীথার শোভন চেয়ারের আসনসংখ্যা ৬০টির স্থলে ৪০ করা হয়েছে। চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীতে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির (এসি) আসন ১৬টি থেকে কমিয়ে ছয়টি, শোভন শ্রেণির আসন ১০০ থেকে কমিয়ে ৫০টি করা হয়েছে। একই ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কুমিল্লার যাত্রীদের আসন ২৫টি থেকে কমিয়ে ১৫টি করা হয়েছে। আর লাকসাম যাতায়াতের জন্য কোনো আসনই দেওয়া হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-ফেনী আসন দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০টি। চট্টগ্রামগামী তূর্ণা-নিশীথার শোভন চেয়ার শ্রেণিতে আসন ৬০টি কমিয়ে ৫০ করা হয়েছে। তবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) আসন পাঁচটিই রয়েছে।
এদিকে আগামী মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ও ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের আসনসংখ্যাও কমবে। ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন শ্রেণির আসনসংখ্যা ১২৭টি। তা কমিয়ে করা হবে ১০০টি। শোভন শ্রেণির নাম শোভন চেয়ারে পরিবর্তন করা হবে। ওই ট্রেনে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির (এসি) আসন ছয়টি থাকলেও চারটি বাড়ানো হবে। চট্টগ্রামগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন শ্রেণির আসনসংখ্যা ১২৫টি থেকে ৬০টি আসন কমানো হবে। এ ট্রেনে প্রথম শ্রেণির কোনো আসন বরাদ্দ নেই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলী এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, কলেজশিক্ষক শাহীন মৃধা, জাহাঙ্গীর আলম, মাহমুদুল হকসহ অন্তত ১৫ জন যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, লাকসাম, নোয়াখালী অভিমুখী ট্রেনগুলোর প্রতিটিতে প্রতিদিন আসনের তুলনায় দ্বিগুণ-তিন গুণ যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছেন। তাঁরা বলেন, এমনিতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা বা চট্টগ্রামের টিকিট তেমন একটা পাওয়া যেত না। এখন তো আর পাওয়ার আশাই করা যায় না। তাঁরা রেল বিভাগসহ সরকারের কাছে ট্রেনের আসন বাড়ানোর দাবি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেছেন, এ ছয়টি ট্রেনে সবুজ রঙের নতুন কোচ সংযোজনের পরই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আসন কমানো হয়। এমনিতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী রেলপথে চলাচলকারী অন্যান্য আন্তনগর ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের তুলনায় পর্যাপ্ত আসন নেই। বিভিন্ন আন্তনগর ট্রেনে টিকিট বিক্রি বাবদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে সরকারের প্রতিদিন রাজস্ব আয় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাত্রাবিরতির দাবি তোলা হয়। কারণ, ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দেড় ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছায়। বিষয়টি জেলা প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভারপ্রাপ্ত রেলস্টেশন মাস্টার মো. শোয়েব বলেন, নতুন সংযুক্ত বগিতে আসন কম হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য আসন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে যাত্রীদের যাতায়াতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আন্তনগর ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যাত্রীদের জন্য প্রায় ৬৫০টি আসন রয়েছে। আসন কমিয়ে দেওয়া হলেও টিকিট বিক্রি আগের মতোই রয়েছে। প্রতিদিন আন্তনগর এসব ট্রেনের আড়াই থেকে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়।