ছাতকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর শহরে আজ সোমবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। খাদেমুল ইসলাম ও শানে রিসালাত নামের দুটি সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত আবদুল বাসেত ওরফে বাবুলকে (৪৫) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তিনি ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাতক বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গতকাল রোববার থেকে তিন দিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে খাদেমুল ইসলাম নামের একটি সংগঠন। রোববার বিকেলে উপজেলার জাউয়াবাজারে শানে রিসালাত নামের আরেকটি সংগঠনের কর্মীরা তাঁদের একটি ব্যানার টানাতে গেলে খাদেমুল ইসলামের লোকজন বাধা দেন। তখন শানে রিসালাতের লোকজন এ খবর ছাতকে থাকা তাঁদের সংগঠনের লোকজনকে জানান। পরে ছাতকের শানে রিসালাতের কর্মীরা খাদেমুল ইসলামের ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বেলা দুইটার দিকে ছাতক শহরে মিছিল বের করেন শানে রিসালাতের কর্মীরা। মিছিলটি ওয়াজ মাহফিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় ছাতক শহরজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। সংঘর্ষের সময় ওয়াজ মাহফিলের প্যান্ডেল ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে সুনামগঞ্জ শহর থেকে পুলিশ ও র‌্যাব সেখানে যায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মজলু মিয়া (৪৫), আবদুল বাসেত ওরফে বাবুল (৫০), শরীফ মিয়া (২২), আলেক মিয়া (২৫), তানভীর আহমদ (১৮), রুমন মিয়া (১৭), মেহেদী হাসান (১৮) ও আহমেদ শরীফকে (২৫) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে বাবুল মিয়া মারা যান। এ ছাড়া ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত আরও ৭০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহত আবদুল বাসেত ছাতক উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন ছাতক পৌর সভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম চৌধুরী।
ছাতক শহরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আশিকুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে ছাতক পৌর শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ও তাহির প্লাজার সামনের সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হাজারো মানুষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে সাধারণ পথচারীরাও আহত পেয়েছেন। প্রথমে পুলিশ একেবারেই কম ছিল। পরে সুনামগঞ্জ থেকে র‌্যাব-পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছাতক থানার পুলিশ জানায়, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা থাকায় থানার পুলিশ সদস্যের অনেকেই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। তবুও পুলিশের যাঁরাই ছিলেন, তাঁরা সংঘর্ষ থামাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. হারুন-অর-রশীদ জানান, নিহত বাবুলের মাথায় ইটের আঘাত ছিল। তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যায় মারা গেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, দুই পক্ষের হয়ে আশপাশের গ্রামের লোকজনও এসে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় দুই ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কাউকে আটক করা হয়নি। শহরে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।