বাজারের পাশে সেতু নেই, দুর্ভোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার উত্তর প্রান্তের হাওরবেষ্টিত অরুয়াইল বাজার। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছেত্রা নদী। এ নদীর ওপর সেতু না থাকায় ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা তাঁদের পণ্য বাজারে নিতে পারেন না। উপরন্তু এ কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উপজেলার ১০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এখানে সেতু না থাকায় ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া গ্রামে ওই নদীর ওপর সেতু নেই। সেখানে এলাকাবাসী একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এখানে সেতু না থাকায় অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া, অরুয়াইল, কাকুরিয়া, বনিয়ারটেক, রাজাপুর এবং পাকশিমুল ইউনিয়নের বড়ইছাড়া, পরমানন্দপুর, ফতেহপুর, ষাটবাড়িয়া ও হরিপুর গ্রামের মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাদের উপজেলা সদরে বা অরুয়াইল বাজারে যাতায়াত করতে ওই নদী পার হতে হয়। অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ, অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, অরুয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অরুয়াইল ফুলকলি কিন্ডারগার্টেন, পাকশিমুল হাজী শিশু মিয়া উচ্চবিদ্যালয়, রানীদিয়া মহিলা মাদ্রাসা, রানীদিয়া এশায়েতুল উলুম মাদ্রাসার সহস্রাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এখানে নির্মিত সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা দুই দশক ধরে প্রতিবছর সাত মাসের জন্য বাঁশের সাঁকো বানাচ্ছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ফুট।

সাঁকো নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রানীদিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, ১৯৯৭ সালে প্রথম তিনি ও তাঁর প্রয়াত বন্ধু মজর আলী উদ্যোগ নিয়ে এখানে একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছিলেন। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রানীদিয়া গ্রামের ১৬টি পরিবার। এরপর থেকে তাঁরা প্রতিবছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে কয়েক লাখ টাকার বাঁশ, বেত, রশি ও গুনা দিয়ে সাঁকো তৈরি করেন। জুনের মাঝামাঝিতে নদীতে পানি বাড়ার আগেই সাঁকো ভেঙে ফেলতে হয়। তবে এই সাঁকো দিয়ে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল পারাপার হতে পারলেও রিকশা বা পণ্যবাহী ভ্যান পারাপার হতে পারে না। এর ফলে কৃষিনির্ভর এ এলাকার মানুষ কৃষিপণ্য ঘাড়ে-মাথায় করে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে থাকেন।

নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজগামী ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করেই সাঁকো তৈরির উদ্যোগ নিই। এখানে পাকা সেতু হলে আমাদের বড় একটা আশা পূরণ হবে।’

অরুয়াইল আব্দুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘হাওরবেষ্টিত অরুয়াইল বাজারে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ডাকঘর, ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়, পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, একাধিক এনজিও, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও সহস্রাধিক দোকানপাট আছে। হাওরবেষ্টিত ওই ১০ গ্রামের মানুষের প্রধান ঠিকানা অরুয়াইল বাজার। তাই বাজারসংলগ্ন ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি।’

অরুয়াইল ইউপির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এলাকাবাসী সেতুর দাবি করে আসছে। কিন্তু ৪৫ বছরেও সেতু পায়নি। বর্তমান সরকার-প্রধানের কাছে আবেদন এখানে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের জন্য।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাংসদ জিয়াউল হক মৃধা প্রথম আলোকেবলেন, ‘অরুয়াইলে ছেত্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য হাওর উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আধা সরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছি।’

উপজেলা প্রকৌশলী এমদাদুল হক বলেন, ওই সাঁকোর স্থলে ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি পাকা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।