কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে বিভক্তি, স্থবিরতা

কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব ছিল। সর্বশেষ গত বছরের মার্চে পুনরায় নতুন কমিটি গঠন নিয়ে ওই বিরোধ আরও প্রকট হয়। এরপর থেকে নেতৃত্ব নিয়ে মনোমালিন্য এবং পুলিশি হামলা-মামলার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৫ বছর ধরে উপজেলা বিএনপির রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী মো. নূরুল হুদা। আরেক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ জালালউদ্দিন। এই দুই ধারা ‘হুদা গ্রুপ’ ও ‘জালাল গ্রুপ’ নামে পরিচিত। কয়েক দিন আগে নূরুল হুদা মারা যান। মোহাম্মদ জালালউদ্দিনও দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১০ সালে তিন বছরের জন্য উপজেলা বিএনপির ১০১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এতে হুদা গ্রুপের বিল্লাল হোসেন মৃধা সভাপতি, মিজানুর রহমান সরকার সাধারণ সম্পাদক ও জালাল গ্রুপের এমরান হোসেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ওই কমিটি ভেঙে ৭১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এতে বিল্লাল হোসেন মৃধাকে আহ্বায়ক ও মিজানুর রহমান সরকারকে জ্যেষ্ঠ আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়। ওই কমিটির প্রায় সব নেতাই হুদা গ্রুপের। ওই কমিটি এবং আগের কমিটিতে পদ না পাওয়ায় জালাল গ্রুপের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেন।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গত বছরের ১৩ মার্চ ওই কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের বাদ দিয়ে সম্মেলন ছাড়াই পৌর বিএনপির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এমদাদ হোসেন খানকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও এমরান হোসেন মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। এ কমিটির অধিকাংশই জালাল গ্রুপের। এতে স্থান না পেয়ে হুদা গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁরা দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সরকার অভিযোগ করেন, দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বর্তমান কমিটি করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিল্লাল হোসেন মৃধাসহ অনেক পরীক্ষিত নেতা এ কমিটিতে স্থান পাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হুদা গ্রুপের তিন নেতার অভিযোগ, এটি ব্যক্তিবিশেষের ‘পকেট কমিটি’। এ জন্য দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা চলছে। দলীয় ও জাতীয় দিবসগুলো পালন করা হচ্ছে না। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, জিয়াউর রহমানের মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকী এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত কর্মসূচিগুলোও পালিত হচ্ছে না।

তবে উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির দু-তিনজন সদস্য বলেন, গত বছর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের একটি মামলার রায়ের প্রতিবাদে উপজেলা সদরে সমাবেশ করেন তাঁরা। পুলিশ হামলা চালিয়ে ওই সমাবেশ পণ্ড করে দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির প্রায় দুই শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হন ১৫-২০ জন। পুলিশি হামলা ও মামলার ভয়ে দলের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।

মতলব দক্ষিণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়নি পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে হামলা ও মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদ হোসেন খান বলেন, তাঁর কমিটি সক্রিয়ভাবেই কাজ করছে। ইতিমধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁরা একাধিক ইউনিয়নে কমিটি গঠন করেছেন। তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহম্মেদ বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ওই কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সক্রিয় করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।