এক মাসেও খোঁজ মেলেনি বিএনপির দুই নেতার

সাইফুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর
সাইফুল ইসলাম, হুমায়ুন কবীর

এক মাসেও খোঁজ মেলেনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরের। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও পুলিশ তাঁদের উদ্ধারে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখায়নি। এ অবস্থায় পরিবার, স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ নভেম্বর রাত প্রায় সাড়ে ১০টায় লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির ও একই কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন লাকসাম ফেয়ার হেলথ হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লায় যাচ্ছিলেন। কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার হরিশ্চর এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে র‌্যাব পরিচয়ে একদল লোক তাঁদের গাড়িতে করে নিয়ে যায়। তখন চালক সাদেক আহমেদ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে লাকসামে ফিরে যান। তিনি জানান, র‌্যাব বিএনপির নেতাদের নিয়ে গেছে। ওই রাতেই র‌্যাব সদস্যরা কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় সাইফুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবিরকে গাড়িতে রেখে জসিম উদ্দিনকে নামিয়ে নেন। রাতেই জসিমকে র‌্যাব লাকসাম থানায় হস্তান্তর করা হয়। একই রাতে র‌্যাব লাকসামে সাইফুল ইসলামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ জনকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করে। তবে সাইফুল ও হুমায়ুন কোথায় আছেন, তা র‌্যাব ও পুলিশ কেউ বলতে পারছেন না।
ওই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, র‌্যাব সদস্যরা দুই বিএনপি নেতাকে তুলে নিয়ে যান। ‘নিখোঁজ’ দুই নেতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দল, ব্যবসায়ী সমাজ ও দুই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও হরতাল করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু এক মাসেও তাঁদের হদিস মেলেনি।
সাইফুল ইসলামের ছোট বোন সেলিনা আক্তার বলেন, ‘ঘটনার এক মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ভাইয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভাইয়ের সন্তানেরা ও স্ত্রী ঢাকায় থাকে। তারা অস্থিরতায় রয়েছে।’
এদিকে এক মাস ধরে বড় ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে হুমায়ুন কবিরের বাবা রঙ্গু মিয়া (৭৫), মা রাজিয়া খাতুন (৬২) এখন অনেকটা বাকরুদ্ধ। শুভানুধ্যায়ী ও স্বজনেরা তাঁদের কাছে গেলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। আর দুই চোখ দিয়ে পানি ফেলেন। হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ‘ছোট মেয়ে মাইশা বারবার জানতে চায় তার বাবা কোথায় গেছেন? এত দিন হলো এখনো আসছে না কেন? সে তার বাবার জন্য ভীষণ কান্না করে। মেয়ের এসব প্রশ্ন এবং কান্না দেখে নিজেকে সামলাতে পারছি না। এখন আল্লাহই আমাদের একমাত্র ভরসা।’
হুমায়ুন কবিরের একমাত্র ছেলে শাহরিয়ার কবির বলে, ‘র‌্যাব তাঁকে আটক করেছে। কিন্তু এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমার বাবার কোনো সন্ধান দিতে পারছে না। আমি প্রশাসনের কাছে বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানাচ্ছি।’
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের বলেন, ‘দুই নেতার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ১ ডিসেম্বর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। এর বাইরে আমরা আর কিছু বলতে পারছি না।’