পথখাবার, কাঁচকলা ও স্ট্রবেরির ভর্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড ভর্তা l প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড ভর্তা l প্রথম আলো

কাঁচাকলার ভর্তা। শুনে কি রোগীর পথ্য বলে মনে হচ্ছে? এই কলাভর্তা খেতেই কিন্তু দুই চাকার ঠেলার সামনে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। কাঁচাকলার সঙ্গে কাঁচা মরিচ, তেঁতুল, জলপাই, ধনেপাতাসহ নানা কিছু মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে এই ভর্তা। ‘খেতে কেমন?’ লোকপ্রশাসনের শিক্ষার্থী সাদিয়া বললেন, ‘অসাধারণ! প্রতিদিন খাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের গেট দিয়ে ঢুকে কলাভবনের দিকে হাঁটতে থাকলে লোহার হামানদিস্তার ঠং ঠং শব্দ কানে আসে। ‘ভর্তা মামা’রা কাঁচকলা, আপেল, বরই, কতবেল, পেয়ারাসহ নানা ধরনের ফল হামানদিস্তায় পিষে তৈরি করেন বিচিত্র সব ভর্তা। বাদ যায়নি বিদেশি ফল স্ট্রবেরিও। সেই তালিকায় রয়েছে কাঁচকলার ভর্তা। এসব ভর্তা বিক্রির ঠেলাগুলোর সামনে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখে এর জনপ্রিয়তাও বেশ আন্দাজ করা যায়।

বিচিত্র ফলের ভর্তার বিক্রেতা আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছর তিনেক আগে মফিজ হোসেন কলাভবনের সামনে প্রথম কাঁচকলার ভর্তা বিক্রি শুরু করেন। খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এই নতুন পদ। এখন তিন বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কলাভর্তা বিক্রেতার সংখ্যা ১০-এর বেশি। আরিফ যেমন এখন পেশা বদল করে কাঁচকলা-বরই ভর্তা বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘আগে চা-বিড়ি বেচতাম। এই আইটেম বেশি চলে। তাই এইডায় আইছি।’  

কলাভর্তার উদ্ভাবক মফিজ হোসেনকে পাওয়া গেল না। কিন্তু ভর্তার প্রস্তুতপ্রণালি পাওয়া গেল সহজেই। ভর্তা বিক্রেতা আবদুল্লাহ বললেন, কাঁচকলা টুকরা করে কেটে সরিষা, কাসুন্দি, মরিচ, ধনেপাতা, তেঁতুল, বিটলবণ, চিনি মিশিয়ে এই ভর্তা তৈরি হয়। বরইভর্তার উপকরণও এক। আবার কলা, বরই, পেয়ারা একসঙ্গে পিষে ‘মিক্সড ভর্তা’ও জনপ্রিয়। একই কায়দায় আপেলের ভর্তাও বানানো হয়। তবে শুধু মফিজ হোসেনের কাছেই পাওয়া যাবে এটি। কলাভর্তা-বরইভর্তার দাম শুরু ২০ টাকা থেকে। আপেলভর্তা ৪০ টাকা। আর পেয়ারা মাখানো ১০ টাকায় পাওয়া যায়। বিক্রেতারা বললেন, দিনে তাঁরা দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় করেন। তবে ছুটির দিনে বিকিকিনি বাড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-শাহবাগ এলাকায় প্রায় ১৫ জন বিক্রেতা আছেন, যাঁরা ঘুরে ঘুরে স্ট্রবেরির ভর্তা বিক্রি করেন। স্ট্রবেরির ভর্তার বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বললেন, এই ফলটি মাত্র মাস দেড়েক সময় বাজারে থাকে। তাই স্ট্রবেরির ভর্তার বিক্রেতারা সব মৌসুমি ব্যবসায়ী। স্ট্রবেরির ভর্তার দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা।

টক-ঝাল ভর্তার ক্রেতাদের দলে নারী-পুরুষ দুই পক্ষই আছে। কারা বেশি কেনে? বিক্রেতা নাসির উদ্দিন বলেন, ছেলেমেয়ে সমান সমান। ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার বিভাগের মাহমুদুল হক আর তানভীর ভর্তা কিনতে এসে বিক্রেতাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কতটা ঝাল আর টক চান। মাহমুদুল বলেন, ছেলেরা ভর্তা-টক এসব খায় না, এটা ভুল ধারণা। খেতে ভালো হলে সবাই সেটা খেতে ভালোবাসে।