দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তিন মাসেও জমা পড়েনি

তিন মাসেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় করা ‘হত্যা’ মামলার তদন্ত থেমে আছে। দিয়াজের পরিবারের অভিযোগ, অদৃশ্য কারণে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা দোওয়া হচ্ছে না।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়ার আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক দলটি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার, ম্যাজিস্ট্রেট ও হাটহাজারী থানার তৎকালীন পরিদর্শকের (তদন্ত) সঙ্গে কথা বলতে চায়। আগামীকাল সোমবার দলটি আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসতে পারে।
দিয়াজের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের সদস্যদের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। তাঁরা সঠিক রিপোর্ট দেবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।’
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজে দিয়াজের মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদকে প্রধান করে গঠিত তিনজনের প্রতিনিধিদল পুনঃতদন্ত করে। দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত শেষে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সোহেল মাহমুদ বলেছিলেন, মরদেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এখনই কিছু বলতে চান না তাঁরা। পুরো তদন্ত শেষে এ বিষয়ে কথা বলবেন তাঁরা।
এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর দিয়াজের মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। দুই দিন পর ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে এমন আলামত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেলেনি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তখন মত দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের চিকিৎসকেরা। তবে এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের পরিবারসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। তারা বলে, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের কোনো মিল নেই। এরপর আদালতের নির্দেশে দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে ঢাকায় দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়।
ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামে গিয়ে এসপি, হাটহাজারীর পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্য পাইনি। তাঁদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য আমাদের আবার চট্টগ্রামে যেতে হবে। কিন্তু সবকিছু সমন্বয় করার দায়িত্ব সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তার। ১৩ মার্চ আমাদের চট্টগ্রামে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল হবে।’
গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ২২ দিন আগে দিয়াজসহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব চালানো হয়। ৯৫ কোটি টাকার দরপত্রের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার আগে দিয়াজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ময়নাতদন্ত হতে হবে তথ্যনির্ভর। তারা (চিকিৎসক দল) চট্টগ্রামে এসে কী দেখল বা না দেখল, সেটা বড় কথা নয়। লোকজনের সঙ্গে কথা বলাও মুখ্য বিষয় নয়।’ তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত দলের সদস্যরা একবার চট্টগ্রামে এসেছিলেন। প্রয়োজনে আবার আসবেন। তাঁদের সহযোগিতা করা হবে।