কড়াইল বস্তি: বারবার আগুন, কারণ তবুও অজানা

বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম
বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম

কড়াইল বস্তির বউবাজার মুদি দোকান ছিল সোলায়মান মিয়ার। বেচাকেনা হতো বেশ। দোকানটিতে প্রায় সাত লাখ টাকার পণ্য ছিল। ৪ ডিসেম্বরের আগুনে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিল তাঁর দোকানটি। কিন্তু গতকাল বুধবার রাতের ভয়াবহ আগুনে আর রক্ষা পায়নি, সোলায়মানের দোকানের সব পুড়ে ছাই। গত বছরের ১৪ মার্চ বস্তিতে আরেক দফা আগুন লাগার পর বেশ কষ্ট করে দোকানটি রক্ষা করেছিলেন চল্লিশোর্ধ্ব সোলায়মান। 

ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সোলায়মান মিয়া বলেন, ‘কেউ কয় কারেন্টের তার জ্বইল্যা আগুন লাগছে। আরেকজনে কয় কয়েল ধইরা লাগছে। অনেকে কয় জায়গা দখল করনের লইগ্যা আগুন ধরাইছে। কথা তো অনেক আছে। তয় আগুন একটা কারণে লাগে। হেইডাই জানলাম না।’

বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম
বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম

সোলায়মানের মতো কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের কাছে বারবার অগ্নিকাণ্ডের কারণ অজানা। বিটিসিএলের প্রায় ৯৫ একর জায়গায় ওপর গড়ে উঠেছে কড়াইল বস্তি। বারবারই আগুনের লেলিহান শিখা এই বস্তিতে ছোবল মারে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক দশকে ১৫ বারের বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এখানে। বারবার এই বস্তিতে আগুন লাগলেও কারণ বস্তিবাসীর মতো অজানা প্রশাসনের কাছে। অন্যদিকে যাদের চেষ্টায় এই আগুন নেভানো হয়, সেই ফায়ার সার্ভিসের কাছেও এ ব্যাপারে পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি।

বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম
বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজের নেতৃত্বে তাদের ২০টি ইউনিট পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে আগুন ধরার বহু কারণ রয়েছে। আমি বলব অবহেলা। এখানে বিদ্যুতের প্রচুর সংযোগ অবৈধভাবে টানা হয়েছে। সেই বিদ্যুতের তার আবার পুরোনো। এসব তারে কত পরিমাণ বিদ্যুৎ লোড নেওয়া যায়, সে সম্পর্কেও ব্যবহারকারীরা জানেন না। চোরাই সংযোগে হিটার চালানো হয়।’
বিদ্যুতের মতো গ্যাস ও পানিরও প্রচুর অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে জানান মেজর শাকিল নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘বস্তিতে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে চলে যান। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ধূমপান করে শলাকা যেখানে-সেখানে ফেলে দেন। আগুন যে কারণেই ধরে থাকুক না কেন, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই আমরা এই বস্তিতে বসবাসকারীদের ব্যক্তিপর্যায়েও আগুন নেভানোর সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেব।’

বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম
বুধবার রাতে ভয়াবহ আগুনে বিধ্বস্ত রাজধানীর কড়াইল বস্তি। এখানে একাধিক বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এর কারণ অজানাই রয়ে গেছে। ছবি: আবদুস সালাম

বারবার অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও এর সমাধান নেই নগর কর্তৃপক্ষের কাছে। সকালে কড়াইল বস্তির ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘এ প্রশ্ন করা সহজ। কিন্তু এর উত্তর মাইলের পর মাইল লম্বা। এখানে যারা থাকেন, তারা অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে থাকেন। ফায়ার সার্ভিসকে এখানে পানি দেওয়ার জন্য পাইপ প্রায় দেড় কিলোমিটার ঘুরিয়ে আনতে হয়েছে। এত ঘিঞ্জি পরিবেশ সেখানে স্থায়ী কোনো সমাধানের কথা বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। তবে আপাতত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য করব।’
আগুন যেমন কড়াইল বস্তিকে বিধ্বস্ত করেছে, তেমনি বস্তি উচ্ছেদের চেষ্টা চলেছে একাধিকবার। কখনো রাষ্ট্রপক্ষ, কখনো সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও এই চেষ্টা চালানো হয়। বস্তিবাসীর বাধায় এ উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি।