সবচেয়ে বেশি শিশু নির্যাতন ঢাকায়

গত বছর ৩০৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, যাদের মধ্যে ২২ জনই মারা যায়। নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। তবে সবচেয়ে বেশি শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ঢাকায়। 

বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) তৈরি ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ছয়টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনটি আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এমজেএফের কর্মসূচি সমন্বয়কারী আবদুল্লা আল মামুন। প্রতিবেদনে গত বছর প্রকাশিত ইতিবাচক ও নেতিবাচক খবরগুলোকে আলাদাভাবে দেখানো হয়েছে। একইভাবে এর আগের বছরের তুলনায় কোন কোন নির্যাতন কমেছে বা বেড়েছে, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে।
গত বছর ২২১ জন শিশুর সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে ১৭৩ জন শিশুই মারা যায়। ৫০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে ঢাকায়, এর মধ্যে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে যাত্রাবাড়ীতে। পানিতে ডুবে, বজ্রপাতে, ট্রেনের নিচে পড়েসহ নানান দুর্ঘটনায় ৪৫১ জন শিশু মারা যায়। এ ক্ষেত্রেও দুর্ঘটনার ঘটনা ঢাকায় বেশি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ঢাকার খবর প্রকাশিত হয় ৪০ শতাংশ, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায় এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২০ ও ১৫ শতাংশ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত ১১২টি সংবাদে ১৩৩ জন শিশুর নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ৪০ শতাংশ শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
৮৮ জন শিশুর আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয় গত বছর। ২০১৫ সালের মতো গত বছরও ঢাকা জেলায় সর্বোচ্চসংখ্যক শিশু আত্মহত্যা করে।
গত বছর সংবাদপত্রে প্রকাশিত ২৭টি সংবাদে ২৫৯ জন শিশুর বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ৫১টি সংবাদে ১১৫ জন শিশুর এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। এ ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ ঢাকা জেলায় (৫০ শতাংশ) এবং এরপর টাঙ্গাইল জেলায় বেশিসংখ্যক শিশুদের অপরাধে সম্পৃক্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়।
গত বছর চারজন শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়। ঢাকা ও পটুয়াখালীতে এ ঘটনাগুলো ঘটে। ২০১৫ শরীয়তপুর, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, যশোর ও সুনামগঞ্জ জেলায় অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনাগুলো বেশি ঘটেছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, অপরাধের সঙ্গে জড়িত শিশু, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যা, অনিশ্চিত আগামী, পাচার এবং শৈত্যপ্রবাহে আহত, নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশু সম্পর্কিত খবর বেশি প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনা, অন্যান্য দুর্ঘটনা, শিক্ষাসংক্রান্ত সমস্যা, যৌন নির্যাতন (ধর্ষণ ছাড়া), হত্যা ও হত্যাচেষ্টা, অপহরণ, অপহরণের চেষ্টা, আত্মহত্যা, বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা, অ্যাসিড নিক্ষেপ এবং রাজনৈতিক সহিংসতার খবর কম প্রকাশিত হয়েছ। খবর কম বা বেশি প্রকাশের ভিত্তিতে ঘটনা বাড়া বা কমার প্রবণতা হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আইন প্রয়োগ ও বিচার, বাল্যবিবাহসহ নানা নির্যাতনের হাত থেকে শিশুকে উদ্ধারসহ গত বছর শিশু সম্পর্কিত ইতিবাচক ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয় ১ হাজার ১০৩টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ১ হাজার ৬০৪।
বাল্যবিবাহ বেড়েছে: গত বছর ২১টি প্রকাশিত সংবাদে ৮৩ জন শিশুর বাল্যবিবাহ হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। এদের মধ্যে চারজন শিশু হত্যা ও আত্মহত্যার শিকার হয়। তবে গত বছর প্রশাসনের উদ্যোগ ও শিশুরা বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে—এ ধরনের খবর ছিল ৫০টি। ২০১৫ সালে ১১টি সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে ১১ জন শিশুর বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সদ্য পাস হওয়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ ধারা ও সরকার আইনের যে বিধিমালার খসড়া করেছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি পুনর্বিবেচনা করা এবং বিশেষ ধারার বিষয়ে বিধিমালায় সবকিছু স্পষ্ট করার আহ্বান জানান।