নৌকা-লাঙ্গলের দ্বিমুখী লড়াই

২২ মার্চ অনুষ্ঠেয় গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে নৌকা ও লাঙ্গলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

উপনির্বাচনে মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা আহমেদ, জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী, জাসদের মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক, জেপির ওয়াহেদুজ্জামান সরকার, গণফ্রন্টের শরিফুল ইসলাম, এনপিপির জিয়া জামান খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তফা মোহসিন। এখানে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থী দেয়নি।

গতকাল শুক্রবার সকালে সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী সাতজন হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার সঙ্গে লাঙ্গলের। ২০০১ সালের নির্বাচনে এখানে জামায়াতের প্রার্থী আবদুল আজিজ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাংসদ মনজুরুল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল কাদের খান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনজুরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯১ সালে জাতীয় পার্টির হাফিজার রহমান প্রামাণিক এবং ১৯৯৬ সালে একই দলের ওয়াহেদুজ্জামান সরকার সাংসদ ছিলেন।

এলাকাটি অনেকটা জামায়াত-অধ্যুষিত। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর এখানে পুলিশের চার সদস্য হত্যাসহ অসংখ্য নাশকতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সে সময় মোট ৩২টি মামলায় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির প্রায় ৬০ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। শুধু তা-ই নয়, ৫ জানুয়ারির আগে-পরে একাধিক নাশকতার মামলায় জামায়াত-বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। এসব কারণে বিএনপি-জামায়াত মনে করে, নৌকার বিপরীতে যাঁর অবস্থান ভালো, তাদের সমর্থকেরা তাঁকেই বেছে নেবেন।

জানতে চাইলে শামীম হায়দার পাটোয়ারী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এলাকার উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এখানে ১৮-৪০ বছর বয়সের ভোটার ৬০-৭০ ভাগ। তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আছি। আশা করি, উপনির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হব।’

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৃতীয় স্থানে ছিল। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক উপায়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল না হওয়ায় দলের একটা বড় অংশের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। বিশেষত ত্যাগী ও উদীয়মান নেতা-কর্মীরা হতাশ। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ না নিলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় ওই নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকছেন। তবে নিহত সাংসদ মনজুরুলের স্ত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খুরশীদ জাহান এবং মনজুরুলের দুই বোন নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম মোস্তফা আহমেদ বলেন, ‘আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন অনেক উন্নয়ন করতে পেরেছি। দল ক্ষমতায়, আমি সাংসদ নির্বাচিত হলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে। জনসমর্থনে এগিয়ে আছি। আশা করি, জনগণ আমার পক্ষে রায় দেবেন।’

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জের সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৬। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৪১ জন।