দেশে দিনে যক্ষ্মায় মারা যাচ্ছে ২০০, আক্রান্ত এক হাজার

বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। আর দিনে ২০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে যক্ষ্মায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ বৈশ্বিক যক্ষ্মা প্রতিবেদন ২০১৬-তে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
১২ জন আন্তর্জাতিক ও ২৮ জন দেশি বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পর্যবেক্ষণ মিশন (জয়েন্ট মনিটরিং মিশন—জেএমএম) ২০১৬ সালের ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি মূল্যায়ন করে। এই কমিশন বলছে, যক্ষ্মা এখনো বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। ৪০ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী এবং ৮০ শতাংশ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী এখনো শনাক্ত হচ্ছে না। এর কারণ বিপুল জনসংখ্যা, ডায়াবেটিসের প্রকোপ, অপুষ্টি, ধূমপানের ব্যাপকতা এবং দারিদ্র্য। যক্ষ্মা নির্মূলের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির এখনো ঘাটতি আছে।
অবশ্য ওই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর রুসেলি হক বলেন, যক্ষ্মা নির্মূলের ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। আগামী পাঁচ বছর মেয়াদি স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচিতে যক্ষ্মার জন্য বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। তিনি আরও বলেন, আগের একাধিক লাইন ডিরেক্টর কর্মজীবনের প্রায় শেষ সময়ে দায়িত্ব পান। তারা পাঁচ-ছয় মাস কাজ করে চলে যান। তাই কিছু কাজ সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে দেশে ১৪ বছরের কম বয়সী ৩৭ হাজার শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। আর ১৪ বছরের বেশি বয়সী ৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়। মোট আক্রান্ত হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার মানুষ। সেই হিসাবে প্রতিদিন ৯৯২ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যায় ৭২ হাজার, অর্থাৎ দৈনিক মারা যাচ্ছে ২০০ জন।
বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি চিকিৎসক ও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি প্রণয়নে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয় না। রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও নিরাময়ে যাঁরা দক্ষ, তাঁরা এই কর্মসূচির কোনো খবর রাখেন না। এটা বড় ধরনের দুর্বলতা।’
আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস
আজ শুক্রবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষ্মামুক্ত দেশ হবে’। এ উপলক্ষে গতকাল প্রেসক্লাবে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। আজ তারাসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে। শোভাযাত্রাটি আজ সকাল সাতটায় রাজধানীর শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে শেষ হবে।