সরাইলে দুই দফা ঝড়: আহত ৪০, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় আজ শনিবার দুই দফা ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়। চারজনকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নৌকাডুবি, গাছপালা উপড়ে যাওয়া ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ভোর পাঁচটা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভোর পাঁচটা ও সকাল নয়টায় দুই দফা ঝড় ও বৃষ্টিতে উপজেলা সদর, চুন্টা, কালীকচ্ছ, পানিশ্বর, পাকশিমুল ও অরুয়াইল ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নয়টার দিকে বয়ে যাওয়া ঝড় আধা ঘণ্টা আর ভোরের রয়ে যাওয়া ঝড় এক ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। ঝড়ে চুন্টা ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের শরাফত মিয়া (৩৫) ও তাঁর দুই শিশুকন্যা সমলা বেগম (৭) ও বুশরা আক্তার (৬) টিনের ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে। গ্রামবাসী তাঁদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া বলেন, ঝড়ে চুন্টা ইউনিয়নের দুই শতাধিক কাঁচা ঘর পড়ে গেছে।
কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি এলাকায় আজম ব্রিকস নামের ইটভাটার একটি পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে। অন্য একটি ঘরের টিন উড়ে গেছে। ওই ইটভাটার অন্তত ৩০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে মামুন মিয়া (৩০), সোহাগ মিয়া (৩৮), আবদুল লতিফ (৬০) ও অহিদ মিয়াকে (৬৫) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৫ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ঝড়ে পানিশ্বর বাজার এলাকায় মেঘনা নদীতে আড়াই মেট্রিক টন ধানবোঝাই একটি নৌকা ডুবে গেছে। পানিশ্বরের ইউপি চেয়ারম্যান দীন ইসলাম মিয়া বলেন, নদীর তীরের কাছাকাছি ছিল নৌকাটি। এতে চার মাঝি সাঁতরে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। এ সময় তাঁরা সামান্য আহত হয়েছেন।
ঝড়ে উপজেলার নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর দুমড়েমুচড়ে গেছে। এতে কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখে।
ঝড়ের পর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সদরের পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শিক্ষার্থী আসেনি। শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা। তবে শিক্ষকেরা এসেছেন। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ হাজার ৯৩ জন। সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তবে অর্ধেকসংখ্যক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে শাহবাজপুর উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখানের ১ হাজার ৮৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮০০ জন উপস্থিত ছিল।
ঝড়ের পর পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হলেও পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সরাইল উপজেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায় বলেন, ঝড়ে বিধ্বস্ত বিদ্যুৎ লাইন মেরামত করা হচ্ছে। তবে পুরো উপজেলায় দ্রুত সংযোগ দেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিজানুর রহমান বলেন, ঝড়ে সহস্রাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউপির চেয়ারম্যান, সদস্য ও চৌকিদারদের চেষ্টায় সড়কে উপড়ে পড়া গাছগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে ইসরাত বলেন, দুই দফা ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সেসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।