ঝড় শেষে আলো ছড়াল শিক্ষার্থীরা

ভাষা প্রতিযোগে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। ছবি: সোয়েল রানা
ভাষা প্রতিযোগে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। ছবি: সোয়েল রানা

সকাল ছয়টা। হঠাৎ ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যায়। চৈত্র মাসেও আষাঢ়ে মেঘের গর্জন। একটু পরেই ঝোড়ো হাওয়া তারপর মুষলধারে বৃষ্টি। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আদৌ ভাষা প্রতিযোগে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে আসবে কি না, এ নিয়ে শুরু হয় চরম উৎকণ্ঠা। কর্তৃপক্ষের কাছে আসতে থাকে একের পর এক ফোন। অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রশ্ন, এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে অনুষ্ঠান হবে কি না। তবে বৈরী আবহাওয়া কাটিয়ে সূর্যের হাসি ফুটে উঠলে আয়োজকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। তখন সকাল সাড়ে নয়টা বাজতে আরও এক ঘণ্টা বাকি। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মা-বাবার হাত ধরে, কেউবা শিক্ষকের সঙ্গে দল বেঁধে আসতে শুরু করে। ১০টা বাজার আগেই উৎসবস্থল রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। ঘড়ির কাঁটা বেলা ১১টায়। জয়পুরহাট জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উঠল পতাকা, উড়ল বেলুন, শুরু হলো উৎসব।


আজ শনিবার এমনই ছিল এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ ২০১৭-এর জয়পুরহাট আঞ্চলিক উৎসবের শুরুটা। উৎসবে জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগাঁ ও গাইবান্ধা থেকে ৯১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এ চারটি বিভাগে বিভক্ত ছিল। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জয়পুরহাট বন্ধুসভার বন্ধুরা। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সহযোগিতার বাড়তি মাত্রা যোগ করেন ঢাকা থেকে আসা প্রথম আলোর বন্ধুরা। পুরো আয়োজনেই ছিল উৎসবের আবহ।

বেলা ১১টায় অতিথিদের নিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবদুর রহিম। ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নওশাদ আলী। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৪০ মিনিটের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ ঢাকায় নির্বিচার গণহত্যা চালায়। ওই হত্যাকাণ্ডকে কেন অপারেশন সার্চলাইট ও কালরাত বলা হয়? কবি জীবনানন্দ দাসের ‘হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর বুকে’—কবি এখানে হাজার বছর বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন? বর্ষাকে বিরহের ঋতু কেন বলা হয়? এমন নানা ধরনের বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন আসতে থাকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। প্রশ্নের জবাব দেন অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আছাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন-অর-রশীদ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, ক্ষেতলাল এস এ কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাধন কুমার সরকার, শ্রীনগর কলেজের সহকারী অধ্যাপক কুদরত-ই-হুদা। প্রশ্নোত্তর পর্বে ভালো ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করার জন্য অনেক শিক্ষার্থী পুরস্কার হিসেবে বই জিতে নেন।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে শুরু হয় ‘বানান বীর’ নামে মজার প্রতিযোগিতা। পাঁচ মিনিটের শুদ্ধ বানান প্রতিযোগিতায় মাধ্যমে ১০ জনকে বেছে নেওয়া হয়। সহকারী অধ্যাপক মামুন-অর-রশীদের উপস্থাপনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এই পর্ব। এতে প্রথম হয় কালাই ওমর কিন্ডারগার্টেন একাডেমির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোস্তাকিম আহম্মেদ। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখেন শিল্পী সাজেদ ফাতেমী।

বিকেলে পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। ৪ বিভাগে ৬০ জন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। তারা ঢাকায় জাতীয় উৎসবে অংশ নেবে। ভাষা প্রতিযোগ অনুষ্ঠানে সেরাদের সেরা নির্বাচিত হয় বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনিমা তানহা শ্রেয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ও ভাষা প্রতিযোগ ২০১৭-এর সমন্বয়ক অরুণ বসু। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জয়পুরহাট বন্ধুসভার সভাপতি তুলশী চন্দ্র মোহন্ত।