কর্ণফুলীর তীরে ছাত্রদল নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ

নুরুল আলম
নুরুল আলম

চট্টগ্রামের রাউজানে কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় ছাত্রদলের এক নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত নুরুল আলম ওরফে নুরু (৪৩) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বুধবার রাত ১২টায় পুলিশ পরিচয়ে চট্টগ্রাম নগরের চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে স্বজন ও বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন।
গতকাল সকাল ছয়টার দিকে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া খেলারঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীরে নুরুল আলমের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। এর প্রায় ১০ ঘণ্টা পর বিকেল চারটার দিকে রাউজান থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। রাউজান উপজেলা সদর থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। আর চট্টগ্রাম নগর থেকে রাউজান উপজেলা সদরের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। নুরুল আলমের গ্রামের বাড়ি রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায়।
কোয়েপাড়া খেলারঘাটের ঘটনাস্থল থেকে নুরুল আলমের ভগ্নিপতি জাফর আহমদ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার রাত ১২টায় চট্টগ্রাম নগরের চন্দনপুরার বাসা থেকে সাত-আটজন লোক তাঁর শ্যালককে তুলে নিয়ে যায়। এদের মধ্যে একজন মুখোশধারী ছিল। তাঁরা খবর পেয়ে রাতেই রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি ও থানায় গিয়ে খোঁজ করেন। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে কিছু জানে না বলে জানায়।
জাফর আহমদ বলেন, মামলা-মোকদ্দমার কারণে বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকতেন নুরুল আলম। চন্দনপুরার বাসায় তাঁর (নুরুল) স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে থাকত। গতকাল বেলা দুইটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন তিনি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, নুরুল আলমের হাত ও পা নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। ওড়না দিয়ে তাঁর মুখ এবং শার্ট দিয়ে চোখ বাঁধা ছিল। মাথায় দুটি গুলির দাগ এবং শরীরে জখমের চিহ্ন ছিল। পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে রাউজান থানায় হত্যার অভিযোগে দুটিসহ মোট চারটি মামলা রয়েছে।
নুরুল আলমসহ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন ৬২ জন।
রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ জাভেদ চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে নুরুল আলমকে তুলে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল যদি মামলার আসামি হন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত ছিল। ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হলো কেন?
অবশ্য বিএনপির এই নেতার করা অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই শেখ জাভেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার দিবাগত রাত দুইটা পর্যন্ত আমি রাউজানের একটি মাদ্রাসা এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ছিলাম। নুরু নামের কাউকে আটক বা শহরের বাসা থেকে তুলে আনার বিষয়টি আমার জানা নেই।’
মাথায় গুলি করে নুরুলকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়েত উল্লাহ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, তাঁর খুনের ঘটনায় পরিবার মামলা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তাঁরা।
প্রায় ১০ ঘণ্টা ছাত্রদলের নেতার লাশ নদীতীরে পড়ে থাকার বিষয়ে ওসি বলেন, তিনি গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে ছিলেন। দুপুরের পর সাংবাদিকদের কাছ থেকে মুঠোফোনে লাশ পড়ে থাকার খবর পান। এরপরই লাশ উদ্ধারের জন্য সেখানে পুলিশ পাঠান ও লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন। এর আগে লাশ পড়ে থাকার বিষয়ে কেউ পুলিশকে কিছু জানায়নি।
এদিকে গতকাল বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, শুধু জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ধাবিত করতে এবং ভারত সফরে দেশবিরোধী চুক্তির বিরুদ্ধে যাতে কোনো যৌবনদীপ্ত প্রতিবাদ গড়ে না ওঠে, সে জন্যই রাষ্ট্রশক্তি এই ছাত্রনেতাকে হত্যা করেছে। এখানে অন্য কোনো ঘাতক নেই।
রিজভী বলেন, গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের বাসা থেকে নুরুল আলমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি ‘হেল্প সেল’ নামের বিএনপি-সমর্থক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। সংগঠনটি গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করত। গুম-খুন বন্ধে বিভিন্ন সময়ে সেমিনারের আয়োজন করেছে সংগঠনটি।