দুই গৃহবধূ ও এক ব্যবসায়ী খুন

জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নড়াইলে গত বৃহস্পতিবার রাতে এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একই রাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা বাজারের এক ব্যবসায়ীকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে গতকাল শুক্রবার মাদারীপুরে আরেক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নে রুমি বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জমিজমাসংক্রান্ত ঘটনায় আদালতে মামলা করায় ওই গৃহবধূর স্বামী বাবুল শেখকে (৩৮) প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এ সময় ঠেকাতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন রুমি বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবুল শেখকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য রুমি বেগমের মরদেহ নড়াইল সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কালিয়া থানা-পুলিশ ও প্রতিবেশী সূত্র জানায়, কচুয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী শেখ তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে চার বছর আগে পাশের বাঐসোনা ইউনিয়নের দক্ষিণ যোগানিয়া গ্রামের নওয়াব আলী শেখসহ শরিকদের কাছ থেকে ১১ শতাংশ জমি কেনেন। গ্রামের প্রভাবশালী দুলু শেখ জোর করে ওই জমি দখল করে রেখেছিলেন। আনোয়ারার ছেলে বাবুল শেখ গত ২৩ মার্চ নড়াইল আদালতে ৪০ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলা করার সাত দিনের মাথায় তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
প্রতিবেশী শাহাজান মোল্লা ও আনছার মোল্লা জানান, বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে দুলু শেখ তাঁর লোকজন নিয়ে বাবুল শেখের বাড়িতে চড়াও হয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ফেলেন। ভেতরে প্রবেশ করে তাঁরা বাবুল শেখকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এ সময় স্ত্রী রুমি বেগম ঠেকাতে গেলে ঘরের মধ্যে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বাবুল শেখ মারা গেছেন ভেবে তাঁকে একটি বস্তায় ভরে পাশের খালে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এ সময় চেঁচামেচি শুনে পাশের লোকজন এগিয়ে এলে তাঁরা পালিয়ে যান।
পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইউসুফ আলী খান জানান, দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার সালিস বৈঠকে বসা হয়। কোনো কাজ হয়নি। তিনি বলেন, বাবুলের স্ত্রীকে খাটের ওপর কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত লোকজন এলাকাছাড়া। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি।
মুঠোফোনে তিন-চারবার দুলু শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী ও ‘বিকাশ মুদি ভান্ডারের’ স্বত্বাধিকারী বিকাশ চন্দ্র সাহাকে (৪০) শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।
বিকাশ ভাঙ্গা পৌরসভার চৌধুরীকান্দা সদরদী মহল্লার বাসিন্দা। এ ব্যাপারে বিকাশের বড় ভাই উত্তম চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
জানা যায়, প্রতিদিনের মতো ভাঙ্গা বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাড়ি রওনা হন বিকাশ সাহা। রাত ১২টায়ও বাড়ি না যাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাঁর মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পান। এরপর বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে খুঁজতে থাকেন। রাত দেড়টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে ঝিলু মিয়ার বাঁশবাগানে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
ভাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফ হোসেন বলেন, বিকাশ সাহাকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল শুক্রবার সকালে মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মাদারীপুরে মুন্নি আক্তার (২০) নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে সদর থানার পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলার বনগ্রাম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, সদর উপজেলার তাঁতীবাড়ী এলাকার মোশারেফ মুন্সির মেয়ে মুন্নির সঙ্গে একই উপজেলার বনগ্রাম এলাকার শাজাহান জমাদ্দারের ছেলে আসিফ জমাদ্দারের (২৫) বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই স্বামীর বাড়ির লোকজন সব সময় মুন্নিকে নানাভাবে অত্যাচার করত। সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার রাতে মুন্নিকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
মুন্নির বাবা মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়েকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার কঠোর বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) সুমন দেব বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ফরিদপুর কার্যালয়, নড়াইল প্রতিনিধি ও মাদারীপুর সংবাদদাতা]