রাজশাহীতে ঝুঁকি নিয়ে পুলিশের তল্লাশি

মেটাল ডিটেক্টর ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে ব্যাগ তল্লাশি করছেন এক পুলিশ সদস্য। ছবিটি গত শনিবার নগরের নওদাপাড়া তল্লাশিচৌকি থেকে তোলা l প্রথম আলো ­
মেটাল ডিটেক্টর ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে ব্যাগ তল্লাশি করছেন এক পুলিশ সদস্য। ছবিটি গত শনিবার নগরের নওদাপাড়া তল্লাশিচৌকি থেকে তোলা l প্রথম আলো ­

সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা থাকলেও রাজশাহীতে পুলিশের তল্লাশিচৌকিগুলোতে রয়েছে নিরাপত্তাসংকট। কোনো ধরনের মেটাল ডিটেক্টর ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে দেহ ও ব্যাগে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। আর রাতের বেলা এসব তল্লাশিচৌকি না থাকায় অরক্ষিতই থেকে যায় নগরের প্রবেশপথগুলো।
মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগরের প্রধান তিনটি প্রবেশপথ নওদাপাড়া আম চত্বর, কাশিয়াডাঙ্গা ও কাটাখালীর সমসাদীপুর এলাকায় পুলিশের নিয়মিত তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই তিনটি তল্লাশিচৌকিতে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদস্যরা। মাঝেমধ্যে নগরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। একজন ট্রাফিক সার্জেন্টের নেতৃত্বে প্রতিটি তল্লাশিচৌকিতে পাঁচ থেকে ছয়জন করে সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তবে রাতে কোনো তল্লাশিচৌকি বসানো হয় না। ফলে নগরে অপরাধীদের অবাধে আসা-যাওয়ার সুযোগ থেকেই যায়।
গত দুই দিন তল্লাশিচৌকিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নিজেদের তেমন কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। মূলত তাঁরা মোটরসাইকেলই তল্লাশি করছেন। নগরের ভেতর প্রবেশ এবং নগর থেকে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলগুলো থামিয়ে কাগজপত্র যাচাই করছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। কখনো সন্দেহজনক মনে হলে আরোহীদের দেহ তল্লাশি করছেন। তবে কোনো তল্লাশিচৌকিতেই মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। পুলিশ সদস্যদের জন্য কিছু বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট থাকলেও প্রায়ই সেগুলো না পরেই দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাঁদের।
গতকাল শনিবার নগরের নওদাপাড়া তল্লাশিচৌকিতে কথা হয় দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্ট আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূলত মোটরযান আইন অনুযায়ী বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে বা গোয়েন্দা তথ্য থাকলে যানবাহনে তল্লাশিও চালাই।’
নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘আসলে আত্মঘাতী হামলা হলে সেটা ঠেকানো খুব কঠিন। তবে ক্ষতি যাতে কম হয়, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।’ অপর এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘কারও দেহে বা সঙ্গে বিস্ফোরক থাকলে সেটা হাত দিয়ে তল্লাশি করা বা ব্যাগ খুলে দেখা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। মেটাল ডিটেক্টর থাকলে সহজেই শনাক্ত করা যায়।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তল্লাশিচৌকির জন্য মেটাল ডিটেক্টর বরাদ্দ নেই। এক পুলিশ সদস্য বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাঁরাও কিছুটা শঙ্কিত। তারপরও জনগণের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করতে হয়।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) তানভীর হায়দার চৌধুরী বলেন, তিনটি তল্লাশিচৌকি নিয়মিত বসে। প্রয়োজনবোধে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যও তল্লাশিচৌকি বসে। রাতে তল্লাশিচৌকি বসে না। তবে রাতে অভিযান চলে। মেটাল ডিটেক্টরের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি থানা, ফাঁড়ি, চেকপোস্টের জন্য পর্যাপ্ত মেটাল ডিটেক্টর বরাদ্দ আছে। কেউ যদি ব্যবহার না করে, সেটা তার ভুল। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।