ছাত্রলীগের দুই নেতার নির্দেশেই তাণ্ডব

ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের কক্ষগুলো দখলের চেষ্টা হয়েছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার। তাঁরা এক সপ্তাহ ধরে পরিকল্পনা করে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। হলে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার সঙ্গে এই দুই নেতাসহ বেশ কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।

একাত্তর হলে তাণ্ডবের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৩ মার্চ দিবাগত রাতে ওই হলের বিভিন্ন কক্ষে জোর করে ছাত্রলীগের শিক্ষার্থী তোলা নিয়ে রাতভর তুলকালাম হয়। রাত ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন কক্ষে ছাত্রলীগের কর্মীদের তুলে দেওয়া, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে। হলের আবাসিক শিক্ষকদের ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ। প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করে। মারধর করা হয় এক সাংবাদিককে। এ ঘটনায় ওই রাতেই হলের আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত রোববার উপাচার্যের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে কমিটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিশৃঙ্খলাকারীদের লক্ষ্য ছিল হলটির কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়া এবং ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিবেশ তৈরি করা।

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তদন্ত কমিটি ২২ জন ছাত্রের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এতে বলা হয়, সেদিন ছাত্রদের ফোন পেয়ে আবাসিক শিক্ষকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অরাজক পরিস্থিতি দেখতে পান। এ সময় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের একাংশ বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। আরেক অংশ হলের বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি ও হট্টগোল করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন। রাত সোয়া একটার দিকে প্রাধ্যক্ষ শফিউল আলম ভূঁইয়া হলে এসে শিক্ষকদের নিয়ে মাঠে গেলে মিছিলকারীরা শিক্ষকদের শিবির আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছাত্রদের কথা-কাটাকাটি হয়। হল ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ সময় সেখানে উপস্থিত হলে ছাত্ররা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এরপর প্রাধ্যক্ষ ছাত্রদের নিজ নিজ কক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকদের নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন ছাত্র প্রাধ্যক্ষের কক্ষের জানালা ভাঙচুর করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে সাক্ষ্য দিতে আসা অভিযুক্তরা কমিটিকে জানিয়েছেন, রাসেল ও নয়নের নির্দেশেই তাঁরা এ কাজ করেছেন।

তবে হল শাখার সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার দাবি করেছেন, তাঁরা কাউকে জোর করে কক্ষে তোলেননি। হল শাখার সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ ছাত্ররা সেদিন আন্দোলন করেছিল। আমরা তো পরে এসেছি এবং বিক্ষিপ্ত আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করেছি।’ এক সপ্তাহ আগেই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ এসেছে সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই বক্তব্য অস্বীকার করছি।’

প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দায়ী করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, সে বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেনি তদন্ত কমিটি।’