ডা. এনামের আয় কম, সম্পদ বেশি

গত দুই বছরে ছয় একরের বেশি জমি কিনেছেন ঢাকা-১৯ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ডা. এনামুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. রওশন আরা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই সরকারদলীয় সাংসদ জমির ঘোষিত মূল্য পৌনে দুই কোটি টাকা উল্লেখ করেছেন। তবে জমিগুলোর বাজারমূল্য কমপক্ষে আট কোটি টাকা।
এনামুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ প্রা. লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে এই সাংসদ ওই আট একর জমি নিবন্ধন করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এনামুর রহমান তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, শেয়ার বা ঋণ দেওয়ার কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।
হলফনামায় আওয়ামী লীগে সদ্য যোগ দেওয়া এই আলোচিত চিকিৎসক তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ছয় লাখ ৮৪ হাজার টাকা। আর স্ত্রীর আয় ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। নগদ, ব্যাংকে জমা অর্থ ও শেয়ার বাবদ তা নয় কোটি টাকা রয়েছে বলে দেখিয়েছেন। স্ত্রী ও নিজের নামে ১২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে বলেও ডা. এনামের হলফনামায় দেখানো হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে ওই এলাকায় জমির মধ্যে মালিক ‘ডা. এনামুর রহমান’ লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখতে দেখা গেছে। তাঁর স্ত্রী রওশন আরার নামে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকায় ২৭০ একর জমি কেনা হয়েছে। হলফনামায় ওই জমির কথাও উল্লেখ নেই। ওই দলিলে রওশন আরার স্বামী হিসেবে এনামুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এনামুর রহমানের বার্ষিক ও সম্পত্তির এই হিসাব পর্যালোচনা করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ডা. এনামুর রহমানের আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির হিসাব অসামঞ্জস্যপূর্ণ। বছরে ছয় লাখ ৮৪ হাজার টাকা আয় করলে তার বড় অংশ ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি কীভাবে দুই বছরে আট কোটি টাকার জমি কিনলেন এবং নগদ, ব্যাংকে জমা ও শেয়ার মিলিয়ে আরও আট কোটি টাকার মালিক কীভাবে হলেন, তা পরিষ্কার নয়।
সাভার উপজেলা ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ের সূত্রে ও প্রথম আলোর হাতে আসা ডা. এনামের নামে নিবন্ধিত দলিল অনুযায়ী ওই আট একর জমির পুরোটাই কেনা হয়েছে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। রানা প্লাজা ধসের পর এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে কেনা হয়েছে দুই একর ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ জমি। বাকি জমিগুলো গত দুই বছরের বিভিন্ন সময়ে কেনা হয়েছে।
এনামুর রহমানের হলফনামা: হলফনামায় এনামুর রহমান তাঁর নিজের নামে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকায় কেনা ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তবে নগদ ও ব্যাংকে জমা মিলিয়ে তাঁর দুই কোটি ৮০ লাখ ৪৯ হাজার ৯২ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে দুই কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯২ টাকা, বন্ড ঋণ ও কোম্পানিতে শেয়ার রয়েছে তিন কোটি ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার।
এনামুর রহমানের স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার, ব্যাংকে জমা এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এনামুর রহমানের স্ত্রী ও নিজের নামে মোট ১২০ ভরি সোনা রয়েছে। নবনির্বাচিত ওই সাংসদ নিজের পেশা হিসেবে চিকিৎসক, এনাম মেডিকেল হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের চেয়ারম্যান, এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
করমুক্তসহ এনামুর রহমানের বছরে আয় ছয় লাখ ৮৪ হাজার টাকা ও তাঁর স্ত্রীর আয় ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে এনামুর রহমান তাঁর নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২৯ কোটি ৬৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে সম্পদ বিবরণীতে বলা আছে, এটি প্রতিষ্ঠানিক দায়।