রাস্তায় ইট ফেলে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা

পীরগঞ্জের মিলনবাজার-কাতিহার রাস্তায় খোয়ার বদলে ফেলা হয়েছে ইটের বড় বড় টুকরা। ছয় মাস যাবত এ অবস্থা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
পীরগঞ্জের মিলনবাজার-কাতিহার রাস্তায় খোয়ার বদলে ফেলা হয়েছে ইটের বড় বড় টুকরা। ছয় মাস যাবত এ অবস্থা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ভোমরাদহ ইউনিয়নের কুশারীগাঁও গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তা পাকা করতে রাস্তায় ইটের বড় বড় খোয়া ফেলে প্রায় ছয় মাস ধরে লাপাত্তা হয়ে আছেন ঠিকাদার। এতে ওই রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ভোমরাদহ ও কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ১৫-১৬ গ্রামের মানুষ। এ ছাড়া রাস্তাটি পাকা করতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পীরগঞ্জ এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভোমরাদহ ইউনিয়নের মিলনবাজার-কাতিহার সড়কের হাটবিল সেতু থেকে কুশারীগাঁও হিন্দুপাড়া পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার কাজ শুরু হয় গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর। এ জন্য ২১ লাখ ৮১ হাজার ৯১৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঠাকুরগাঁওেয়র ঠিকাদার আবু হেলাল এই রাস্তা নির্মাণের কাজ পান। রাস্তার কাজ বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান এবং মাস্টাররোলে কর্মরত কার্য সহকারী রোস্তম আলী।
সরেজমিনে ৮ এপ্রিল দেখা গেছে, রাস্তার ওপর বড় বড় ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। এক একটি টুকরা অন্তত ৬০ থেকে ১০০ মিলি মাপের হবে। সাইকেল, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনকে পেছন থেকে ঠেলে ওই ইট ফেলা রাস্তা পার হতে দেখা যায়।
কুশারীগাঁও, সর্দারপাড়া ও মালিপাড়া গ্রামের কুসমত আলী, রবেন চন্দ্র রায়, আজিজুল হক প্রমুখ বলেন, রাস্তাটি অন্তত ছয় মাস আগে খোঁড়া হয়। রাস্তা পাকা করার কাজে সবচেয়ে নিচে মাটি মেশানো বালু ফেলা হয়েছে। তার ওপর যে ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে তা-ও নিম্নমানের। এরপর ইটের এই বড় বড় টুকরা ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তায়। তারপর আর কাজ আগায়নি। পাঁচ-ছয় মাস হলো এভাবেই পড়ে আছে রাস্তাটি।
কুশারীগাঁও গ্রামের আদা ব্যবসায়ী আ. হাকিম বলেন, ‘পীরগঞ্জ উপজেলার কুশারীগাঁও, বোলগাঁও, দক্ষিণ কুশারীগাঁও, মণ্ডলপাড়া, গ্রামডাঙ্গী, ভোমরাদহ, সর্দারপাড়া, গাজিপাড়া, মালিপাড়া, ডাঙ্গীপাড়া, ঘোড়াধাপ, আলমপুরসহ দুই পাশের ১৫-১৬টি গ্রামের কয়েক শ লোক প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করেন। শনিবার এসব গ্রামের শত শত মানুষ কাতিহার হাটে যান। এ রাস্তা পার হতে খুবই কষ্ট হয় আমাদের।’
ভোমরাদহ ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাস আগে রাস্তায় খোয়া তো নয় যেন ইটের বড় বড় টুকরা এনে ফেলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রোলার করা হয়নি। ওই বড় বড় ইটের টুকরার ওপর দিয়ে সাইকেল পর্যন্ত পার হতে পারে না। রাস্তাটি এ অবস্থায় ফেলে প্রায় ছয় মাস যাবৎ ঠিকাদার লাপাত্তা।’
সর্দারপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বড় বড় ইটের টুকরা ফেলে রাখায় ওই রাস্তায় কোনো গাড়ি যেতে চায় না। মিলনবাজার থেকে নয়াহাট পর্যন্ত অটোচার্জারের ভাড়া ২০ টাকা। অথচ পাঁচ-ছয় মাস যাবৎ জনপতি ১০০ টাকা নিচ্ছে।’
ভোমরাদহ ইউপি চেয়ারম্যান হিটলার হক বলেন, ‘ইট বিছানো রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো বিপজ্জনক। তাই মোটরসাইকেল ঠেলে নিতে হয়। পাঁচ-ছয় মাস রাস্তায় খোয়া ফেলে তাতে রোলার না করেই ঠিকাদার লাপাত্তা। অথচ প্রশাসন নীরব।’
এ বিষয়ে কথা বলতে মুঠোফোনে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
উপসহকারী প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাকে অনেকগুলো সাইডের কাজ দেখতে হয়। তাই সব রাস্তার কাজে বেশিক্ষণ সময় দেওয়া যায় না। তবে ওই রাস্তায় ৩ নম্বর ইট ব্যবহার করা হয়নি।’
উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এলজিইডি থেকে ঠিকাদারেরা সময়মতো রোলার পাচ্ছেন না। তাই কাজ পিছিয়ে যেতে পারে। ওই রাস্তার কাজে ৩ নম্বর ইটের ব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’