যুবলীগের হুমকিতে রূপপুর প্রকল্পে বালু ভরাট বন্ধ

স্থানীয় যুবলীগ নেতা-কর্মীদের হুমকিতে পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের বালু ভরাটের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত বুধবার রাতে ৩০ থেকে ৪০ জন যুবলীগ নেতা-কর্মী প্রকল্প এলাকায় মহড়া দেন এবং বালু উত্তোলনের একটি খননযন্ত্র (ড্রেজার) নিয়ে যান।

ঘটনার পর থেকে প্রকল্প এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে র‍্যাব সদস্যরাও ঘটনাস্থলে টহল দিচ্ছেন।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্প এলাকায় বালু ভরাটের কর্তৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু লোকজনের সঙ্গে কয়েক দিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব চলছিল। কিন্তু তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাউকে খুঁজে পাননি। ঘটনার পর থেকে প্রকল্পে বালু ভরাটের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী এ ঘটনায় জড়িত নন। যুবলীগ বরং এই হুমকির নিন্দা জানায়।

রূপপুর প্রকল্পের নতুন অধিগ্রহণ করা ৮০০ একর জমিতে বালু ভরাটের জন্য দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডসহ (টিসিইএল) কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে।

টিসিইএলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুল মান্নান বলেন, রূপপুর প্রকল্পে বালু ভরাটের জন্য রাশিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট’ থেকে ‘অর্গানার স্ট্রয়’ নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ নেয়। অর্গানার স্ট্রয়ের কাছ থেকে তিন কোটি ঘনফুট বালু ভরাটের কার্যাদেশ পেয়েছে টিসিইএল। কাজ পাওয়ার পর থেকে নানা হুমকি পাচ্ছে তারা। ১৭, ১৯ ও ২০ এপ্রিল এ নিয়ে ঈশ্বরদী থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আলাদা তিনটি অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

স্থানীয় সূত্র ও টিসিইএলের দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার তাঁরা ১০টি ড্রেজার ও পাঁচটি বাল্কহেড (বালুবোঝাই কার্গো) নিয়ে প্রকল্প এলাকায় বালু ভরাটের কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যায় হঠাৎ ৩০-৪০ জন যুবক একটি ট্রলারে করে এবং নদীপাড় দিয়ে হেঁটে বালু ভরাটস্থলে আসেন। তাঁরা নিজেদের যুবলীগ নেতা-কর্মী বলে পরিচয় দেন। তাঁরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অস্ত্রের মুখে মালামালসহ একটি ট্রলারে তুলে তাড়িয়ে দেন। এ সময় সেখানে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসির নেতৃত্বে আরও একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে যুবকেরা সেখান থেকে চলে যান। কিছুক্ষণ পর তাঁরা একটি ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে গিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের ওপর আবার চড়াও হন। ফাঁকা গুলি করেন এবং একটি ড্রেজার মেশিন নিয়ে চলে যান।

রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বলেন, ঘটনা জানার পরপরই পুলিশের নিরাপত্তা ও টহল বাড়ানো হয়। ওই যুবকদের কাউকে পুলিশ চিনতে পারেনি। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পশ্চিমে নদী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ড্রেজার মেশিনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, যুবলীগের কয়েক নেতা-কর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গোয়েন্দা সদস্যদের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের কাজ চলছে।