বিক্ষোভ, ঘেরাও, পালিয়েছেন বিদ্যুৎ কর্মীরা

পাটগ্রামে বিদ্যুতের দাবিতে গতকাল লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের পৌরসভার চৌরাস্তা মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয় অধিবাসীরা। ছবিটি বেলা সাড়ে ১১টার সময় তোলা l প্রথম আলো
পাটগ্রামে বিদ্যুতের দাবিতে গতকাল লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের পৌরসভার চৌরাস্তা মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয় অধিবাসীরা। ছবিটি বেলা সাড়ে ১১টার সময় তোলা l প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে উপজেলাবাসী। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের স্থানীয় পৌরবাজার চৌরঙ্গী মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে তারা। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসেন। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ জনতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ঘেরাও করে। অবস্থা বেগতিক দেখে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কার্যালয়ের কর্মচারী ও কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। এ উপজেলায় বিদ্যুৎ-সংকটে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এখানে গত ১২ দিনের মধ্যে ৬ দিনই বিদ্যুৎ ছিল না।
ভুক্তভোগী লোকজন জানান, চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ১২ দিনের মধ্যে ২৫ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দুই দিন ও ৩০ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত চার দিন মিলিয়ে ছয় দিন উপজেলায় বিদ্যুৎ ছিল না। আর বাকি তিন দিনও দিনে ১৫ থেকে ১৭ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে।
সরেজমিনে গতকাল রোববার দেখা গেছে, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের স্থানীয় পৌর বাজার চৌরঙ্গী মোড়ে সড়কের চারদিকে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। পরে পাটগ্রামের ইউএনও কার্যালয়সহ বিদ্যুৎ কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে বিক্ষুব্ধ মানুষ। এ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় বিদ্যুৎ কার্যালয়ের লোকজন কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। পরে বেলা দুইটার দিকে ইউএনওর আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নেয় বিক্ষুব্ধ মানুষ।
এ সময় পৌর বাজারের বেকারি ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, তিন দিন থেকে বিদ্যুৎ নেই। ফলে তাঁর ফ্রিজে রাখা প্রায় ৫০ হাজার টাকার আইসক্রিম নষ্ট হয়ে গেছে।
পৌরসভার রহমতপুর এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী নুরু মিয়া বলেন, ‘রাতে থাকে তো দিনে থাকে না—এই হলো পাটগ্রামের বিদ্যুতের হাল। ঘন ঘন লোডশেডিং এবং লো-ভোল্টেজে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাচ্ছে।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাটগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে লালমনিরহাট জেলা সদর থেকে পাটগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটারে ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের তার টানা হয়। পুরোনো হয়ে যাওয়ায় পিডিবি নতুন করে একটি ডুয়েল কোর ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করে। এই লাইন থেকে চলতি বছর পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় সংযোগ দেওয়া হয়। দুটি লাইনেরই ইনসুলেটরগুলো বজ্রপাত এবং রোদে প্রায়ই পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত স্থান চিহ্নিত ও মেরামত করতে বেশ সময় লাগে।
তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে সদর, আদিতমারী ও কালীগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎ-সেবা অনেকটাই নিরবচ্ছিন্ন থাকলেও ব্যতিক্রম শুধু হাতীবান্ধা এবং পাটগ্রাম উপজেলার ক্ষেত্রে।
পিডিবির পাটগ্রাম কার্যালয় সূত্র জানায়, পাটগ্রাম উপজেলায় বিদ্যুতের সাবস্টেশনের আওতায় থাকা পাটগ্রাম সদর, পানবাড়ি, বাউরা ও বুড়িমারী—এই চারটি ফিডারে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১২ মেগাওয়াট। তবে সরবরাহ পাওয়া যায় ৫ মেগাওয়াট। তা-ও আবার লো-ভোল্টেজের। আর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়।
ইউএনও নূর কুতুবুল আলম বলেন, বারবার বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
পিডিবি পাটগ্রামের আবাসিক নির্বাহী প্রকৌশলী (বিতরণ) আবদুল মতিন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন ৩৩ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। কিন্তু লালমনিরহাট সদর থেকে পাটগ্রাম পর্যন্ত দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা অন্তত ১০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ মেগাওয়াট। তা-ও আবার লো-ভোল্টেজ। গ্রিড লাইন থেকে দূরত্ব বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়া যায়। একই কারণে বারবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। কিন্তু সদর ও পাটগ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে আরেকটি গ্রিড স্থাপন করা হলে এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।