শিবালয়ে চুক্তি করেননি কোনো চালকলমালিক

সরকারকে চাল দিতে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ৭টি চালকলের মালিকের কেউই চুক্তি করেননি। এবার সরকার–নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি। এ কারণে লোকসানে সরকারকে চাল দিতে আগ্রহী নন চালকলের মালিকেরা।
শিবালয় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৭টি চালকল আছে। এর সবগুলোই হাসকিং মিল। এ বছর উপজেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৫১ মেট্রিক টন। সরকারিভাবে চালের দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা। প্রথম দফায় ২০ মের মধ্যে চালকলের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করার কথা ছিল। কিন্তু কেউ চুক্তি না করায় দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যেও এই উপজেলার চালকলের মালিকদের কেউ চাল দিতে চুক্তি করেননি।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, জেলায় কোনো অটো (স্বয়ংক্রিয়) চালকল নেই। ২৩টির সবগুলোতে হাসকিং পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। হাসকিং মিলগুলোতে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা কম। এ কারণে সরকারের চাল সংগ্রহের লক্ষ্য অন্যান্য জেলার চেয়ে এ জেলায় কম।
এ বছর জেলার সাত উপজেলার মধ্যে পাঁচ উপজেলায় মোট ২৩টি চালকলের মধ্যে ১৫টির মালিক চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ২৯১ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে দ্বিতীয় দফায় চাল সংগ্রহের সময়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর ২২৩ মেট্রিক টন দিতে চুক্তি করেন চালকলের মালিকেরা। জেলার সাত উপজেলার মধ্যে দৌলতপুরে কোনো চালকল নেই। অন্য ছয় উপজেলার মধ্যে সদরে ৭টি, সাটুরিয়ায় ১টি, সিঙ্গাইরে ৫টি, ঘিওরে ১টি, শিবালয়ে ৭টি এবং হরিরামপুরে ২টি চালকল আছে। এর মধ্যে শিবালয়ের ৭টি ও সিঙ্গাইরের ১টি চালকলের মালিক চাল দিতে আগ্রহী না হওয়ায় চুক্তি হয়নি।
শিবালয়ের মৌসুমী রাইস মিলের মালিক দানেজ উদ্দিন এবং কল্পনা রাইস মিলের মালিক হারান চন্দ্র ঘোষের ছেলে বিদ্যুৎ চন্দ্র ঘোষ বলেন, বর্তমান বাজারে মোটা চালের দাম ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আর সরকারনির্ধারিত মূল্য ৩৪ টাকা। কেজিপ্রতি ১০ টাকারও বেশি লোকসান হওয়ায় তাঁরা চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হননি।
শিবালয়ের দুজন চালকলের মালিক বলেন, লোকসানে কেউ চাল দিতে চান না। গতবার কলমালিকদের অনেকে লোকসানে চাল দিয়েছেন। কিন্তু এবার বাজার ও সরকারনির্ধারিত দামের ফারাক অনেক বেশি।
চুক্তি না করায় মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহ মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ বলেন, দ্বিতীয় দফায় সময়সীমা বাড়ানোর পরও চালকলের মালিকেরা চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হননি। প্রশাসন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে চালকলের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনগত পদক্ষেপের বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
এসব বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সময়সীমা বাড়ানোর পরও শিবালয়ের কোনো চালকলের মালিক চুক্তি করেননি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।