অতিরিক্ত বালুবাহী ট্রাকের সারি ঠেকাল জনগণ

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ধোবাউড়া-শিবগঞ্জ সড়কে ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু তা উপেক্ষা করে প্রতিদিন এই সড়কে অন্তত ২০০টি বালুবাহী ট্রাক চলাচল করছিল। এতে সড়কটি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ২১ মে রাতে সড়কের বিভিন্ন অংশে গাছের গুঁড়ি পুঁতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তখন থেকে এ সড়কে ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকা থেকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার। তিন বছর আগে এলজিইডি সড়কটি সংস্কার করে। এতে ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর, রণসিংহপুর, বিজয়পুর ও দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মানুষের যাতায়াত সহজ হয়। এদিকে প্রায় আট মাস আগে নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ-জারিয়া সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন থেকে বিকল্প হিসেবে সোমেশ্বরী নদীর বালু ধোবাউড়া-শিবগঞ্জ সড়ক দিয়ে ময়মনসিংহ হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। ধোবাউড়া-শিবগঞ্জ সড়কটি গ্রামীণ জনপদের মানুষের জন্য নির্মাণ করা। এতে রিকশা, ইজিবাইক, টেম্পোসহ হালকা যানবাহন এবং জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের মতো যান চলাচলের অনুমতি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, সড়কটি দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ টন ভারী যান চলাচল করতে পারবে। কিন্তু সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ টন ওজনের বালুবাহী ট্রাক চলাচল শুরু করে। অথচ এ সড়কে ট্রাক চলাচলের ওপর এলজিইডির নিষেধাজ্ঞা ছিল। এলজিইডি সড়কের বিভিন্ন অংশে এ-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। কিন্তু কে বা কারা এসব সাইনবোর্ড তুলে ফেলে।

সড়কটিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালুবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে এলজিইডির ধোবাউড়া উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীনূর ফেরদৌস প্রায় ছয় মাস আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অনুরোধ জানান। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষ ১১ মে এলজিইডির ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ধোবাউড়া-শিবগঞ্জ সড়কে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ টন বালুবোঝাই ২০০ ট্রাক চলাচল করে। এতে সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। এত দিনে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এলজিইডির ধোবাউড়া উপজেলা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ১৪ মে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়ক দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা ইউএনওর কার্যালয়ে সড়কটি নিয়ে জরুরি সভা করেন। ইউএনও দেলোয়ার হোসেনের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা নিজেদের অর্থে সড়কটি সংস্কার করে বালুবোঝাই ট্রাক চলাচলের উপযোগী করবেন। এরপর ওই দিনই সড়কের বিভিন্ন অংশে বালু ফেলে নামমাত্র সংস্কার দেখিয়ে ১৬ মে থেকে আবার ট্রাক চলাচল শুরু হয়। পরে ২১ মে রাতে এলাকাবাসী সড়কের বিভিন্ন অংশে গাছের গুঁড়ি পুঁতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এরপর থেকে ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

২৩ মে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির দাইরপাড়া, কলসিন্দুর, রণসিংহপুর ও গৌরীপুর অংশে বড় বড় গর্ত। পিচ উঠে গিয়ে গর্তের মধ্যে কাদা জমে আছে। রণসিংহপুর ও গৌরীপুর এলাকার মাঝামাঝি ‘জলসেতু’ নামে পরিচিত একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এটির ওপর দিয়ে পানি গড়াচ্ছে। সেতুটির রড বেরিয়ে আছে। ঝুঁকি নিয়ে সতুটি দিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা ও ইজিবাইকসহ হালকা যান চলাচল করছে। দাইরপাড়া এলাকায় দেখা যায়, সড়কের গর্তে বালুবোঝাই কয়েকটি ট্রাক আটকে আছে।

ইউএনও দেলোয়ার হোসেন বলেন, সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এলজিইডির ধোবাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীনূর ফেরদৌস বলেন, ‘চার বছরের আগে এ ধরনের সড়ক সংস্কার করার নিয়ম নেই। তবু সড়কটি সংস্কারের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।’