বনরূপা আবাসনের দখলে খাল চরম দুর্দশায় এলাকাবাসী

নিকুঞ্জ-২, টানপাড়া, জামতলা এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে এক সপ্তাহের বেশি সময়। সড়ক ও বাসাবাড়িতে জমে আছে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি l প্রথম আলো
নিকুঞ্জ-২, টানপাড়া, জামতলা এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে এক সপ্তাহের বেশি সময়। সড়ক ও বাসাবাড়িতে জমে আছে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি l প্রথম আলো

এক সপ্তাহের বেশি নিকুঞ্জ-২, টানপাড়া, জামতলা এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে আছে। সড়ক ও বাসাবাড়িতে জমে আছে ময়লা, দুর্গন্ধযুক্ত পানি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানিপ্রবাহের খালগুলো বেদখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকছে এসব এলাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিকুঞ্জ-২, টানপাড়া, জামতলা সড়কগুলোতে প্রায় হাঁটুসমান পানি। মানুষের বাসাবাড়িতেও পানি। পয়োনিষ্কাশন নালার ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পচা পানি চারদিকে। জামতলার অবস্থা বেশি খারাপ। এই এলাকায় হাঁটুর ওপর পানি জমে আছে। অনেকেই ঘরের ভেতরে জমে থাকা পানি প্লাস্টিকের বালতি কিংবা হাঁড়ি-পাতিল দিয়ে সেচে ফেলার চেষ্টা করছেন। আবার বৃষ্টি হলে ঘরে যেন পানি ঢুকতে না পারে সে জন্য ঘরের প্রবেশমুখে কেউ দিচ্ছেন মাটি কিংবা বালু-সিমেন্ট দিয়ে পাকা বাঁধ। বাসার ভেতরেই ইট অথবা বালুর বস্তা ফেলে কোনোমতে দুই পা ফেলে হাঁটার ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। অনেক স্থানে পানিপ্রবাহের জন্য নালার মুখগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।

জামতলার একদম শেষ সীমানার দিকে সরকার বাড়ির বাসিন্দা তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির পানি ঘরের ভেতরে এবং রাস্তায় জমে আছে। পানির কারণে কোথাও বের হতেই পারছি না।’ ঘরের ভেতরেও রান্নার কাজে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাড়ির ভেতরেও প্রায় হাঁটুসমান পানি।

পশ্চিম টানপাড়ায় ঘরে জমে থাকা পানি বালতি দিয়ে সেচে রাস্তায় ফেলছিলেন মো. আবু রায়হান। তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে বাসার ভেতরে এসেও শান্তি নেই। কারণ ভেতরেও পানি। তিনি বলেন, পা পরিষ্কার করে আর বিছানায় উঠব কী? বিছানায় উঠতেও পচা পানি মাড়িয়ে যেতে হয়।’

বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘সোমবার থেকে মাঠে আছি। কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছি না। বর্ষার আগেই এলাকার সব ড্রেন পরিষ্কার করানো হয়েছে। তবু পানি সরছে না।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে কী করণীয় জানতে চাইলে কাউন্সিলর বলেন, নিকুঞ্জ-১ এবং ২ এলাকার পানিনিষ্কাশনের জন্য প্রথমে ১০০ ফুট লেকের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। দ্বিতীয়ত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের কারণে দখল হয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক খালটি উদ্ধার ও খনন করতে হবে। এই দুটি কাজ দ্রুত না করা হলে নিকুঞ্জ, টানপাড়া, জামতলা এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।

কাউন্সিলর বলেন, মানুষের ঘরের ভেতরে পানি। আবার বৃষ্টি হলে বন্যাকবলিত এলাকার চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হবে।

বনরূপা আবাসিক এলাকায় প্রাকৃতিক খালের সন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, হোটেল লা মেরিডিয়ানের বিপরীতে রেললাইনের পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছয় দরজাবিশিষ্ট একটা স্লুইসগেট আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সেখান থেকেই খালের শুরুটা ছিল। এর ১৫-২০ ফুট পূর্ব দিকে খালের ওপর একটি কালভার্টও আছে। যেটা ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ভারী ইকুইপমেন্ট এবং মালামাল পারাপারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে’ উল্লেখ করে কালভার্টের পাশে একটি সাইনবোর্ডও ঝোলানো আছে। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে আর খালের অস্তিত্ব নেই। সেখানে শুরু বনরূপা আবাসিক এলাকার সীমানাপ্রাচীর।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের করোল্লা করপোরেশন বিডি লিমিটেডের একজন গাড়িচালক খালটির গতিপথ বনরূপার সীমানাপ্রাচীরের দিকে নির্দেশ করে প্রতিবেদককে বলেন, খালটা অনেক স্থানে ভরাট হয়ে গেছে। অনেক স্থানে অনেক দিন ধরে কচুরিপানা জমে আছে। এই খালটা আগে বরুয়া ব্রিজ পর্যন্ত সচল ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রেফাত জামিল প্রথম আলোকে বলেন, পানিপ্রবাহের জন্য সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি স্লুইসগেট আছে। একটি কুড়িল ফ্লাইওভারসংলগ্ন এক দরজার; আরেকটি হোটেল লা মেরিডিয়ানের বিপরীতে বনরূপা হাউজিংসংলগ্ন
ছয় দরজার স্লুইসগেট। বনরূপা অংশের প্রাকৃতিক খালটি দখল ও ভরাট করে ফেলায় আমাদের ছয় দরজার স্লুইসগেট দিয়ে পানিনিষ্কাশন হয় না। কুড়িল ফ্লাইওভারের গেটটি এক দরজার হওয়ায় সেখানে পানির প্রচুর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং পানি ধীরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিকুঞ্জসহ এই এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী প্রকৌশলী ইনামুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত ও আশপাশের এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে খিলক্ষেত রেলগেট থেকে কনকর্ড লেকসিটির পেছনের খালে পাইপ বসানো হবে। প্রায় ২ হাজার ২০০ মিটার পাইপ বসানোর কাজের দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে। কুড়িল উড়ালসড়কের কাছে পাউবোর স্লুইসগেট বন্ধ ছিল, নিকুঞ্জে জমে থাকা পানি সরাতে সেটি খোলা হয়েছে। আর ‘১০০ ফুট’ নামে পরিচিত খালটির দখল উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। আবাসন কোম্পানির দখল করা খাল উদ্ধারের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।