স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য জায়গা খুঁজছে প্রশাসন

রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর পশ্চিম মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুসের ঠিকানা এখন কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আশ্রয়কেন্দ্রে। ১৩ জুন সকালে পাহাড়ধসে হারিয়েছেন স্ত্রী ও ঘরবাড়ি। শিগগিরই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা হচ্ছে না তাঁর। ভূমিধস হওয়া এলাকায় নতুন করে ঘর তোলায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি অন্য যেকোনো স্থানে বাড়ি নির্মাণেও লাগবে অনুমতি। পাহাড়ধসে গৃহহীন কিংবা ঝুঁকিতে থাকা প্রায় সাড়ে সাত শ পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য নিরাপদ জায়গা খুঁজছে প্রশাসন।

গতকাল রাঙামাটি শহরের বিএডিসি আশ্রয়কেন্দ্র প্রথম আলোকে আবদুল কুদ্দুস বলেন, এখন কী করবেন বুঝতে পারছেন না। নতুন করে ঘর বাঁধতেও ভয় লাগছে। প্রশাসনও কোনো পথ দেখাচ্ছে না।

আগামী আগস্ট মাসের আগে আবদুল কুদ্দুসের মতো অন্যদেরও পুনর্বাসনের সম্ভাবনা কম। এখনই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঘর নির্মাণ করে দিলে নতুন করে পাহাড়ধসে তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। এ ছাড়া সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঘর নির্মাণ করে দেবে, নাকি নগদ টাকা দেবে—সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়নি।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান গতকাল তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যত দিন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের স্থায়ী পুনর্বাসন না হচ্ছে, তত দিন এসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকবেন। বর্ষা মৌসুমের দুই মাস তাঁদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হবে। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসন চার একর সমতল অথবা নিরাপদ জায়গা খুঁজছে।

মানজারুল মান্নান বলেন, যেসব স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে, সেখানে আবার ঘর নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসনের কাছে এখন পর্যন্ত ৫০০ বান্ডিল ঢেউটিন মজুত রয়েছে। গৃহনির্মাণের সময় এসব সামগ্রী বিতরণ করা হবে। পাহাড়ধসে নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের এ মুহূর্তে তাদের বাড়িঘরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

গতকাল বিকেল পর্যন্ত রাঙামাটি সদরের ৭৪৪টি পরিবারের ৩ হাজার ৪০০ জন নারী-পুরুষ ও শিশু জেলা প্রশাসনের ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিল। পাহাড়ধসের ঘটনায় রাঙামাটিতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২০ হয়েছে।

গত দুই দশকে রাঙামাটি শহরের শিমুলতলী, রাঙাপানি, যুব উন্নয়ন, ভেদভেদীর নতুনপাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি ও লোকনাথ মন্দির এলাকায় গড়ে ওঠা অধিকাংশ বসতি পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে বলে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, অতীতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এখানে অনেক বসতি গড়ে উঠেছে। এখন আর তা হতে দেওয়া যাবে না।

গতকাল শহরের রূপনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে এবং মাঝখানে কেটে বসতি গড়ে তোলা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা সবলা বেগম বলেন, ‘পাহাড়ধসের পর এখন বৃষ্টি হলে ভয় লাগে।’

রাঙাপানি মোনঘর এলাকার উত্তরপাড়ায়ও পাহাড় কেটে কয়েক ঘর বানানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সোনাধন চাকমা বলেন, পাহাড়িদের পরিবারের আকার বাড়ছে। তাই এখন তাঁরা আগের মতো খুঁটির ওপর ঘর করেন না।

এ বিষয়ে চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, এখন চাকমারাও ঐতিহ্যবাহী ঘর নির্মাণ থেকে সরে আসছেন। ভূমিধস ঠেকাতে হলে নতুন করে বসতি গড়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আশ্রয়কেন্দ্রে শৌচাগার স্থাপন

দুর্গত মানুষের জন্য খোলা রাঙামাটির ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে গতকাল ১২টিতে ৫০০ লিটার ধারণক্ষমতার একটি করে পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে। পাশাপাশি ৭০০টি ১০ লিটার ধারণক্ষমতার জেরিক্যান (পানি রাখার পাত্র) বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি পরিবারকে একটি করে জেরিক্যান দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বসানোর কাজ চলছে বলে জানান রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে।