খিরাই নদে স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সেতু নির্মাণ

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার চরশিলিন্দা গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে খিরাই নদের ওপর নির্মিত কাঠের সেতু। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার চরশিলিন্দা গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে খিরাই নদের ওপর নির্মিত কাঠের সেতু। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো

এক পাশে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার চরশিলিন্দা গ্রাম, আরেক পাশে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার নারান্দিয়া গ্রাম। মাঝখানে খিরাই নদ। এই নদের ওপরই নির্মিত হয়েছে একটি দীর্ঘ কাঠের সেতু। চরশিলিন্দা গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে এটি নির্মিত হয়।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই গ্রামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেতুটির উদ্বোধন করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩২০ ফুট দীর্ঘ ও ৮ ফুট চওড়া এ সেতুর উদ্বোধন করেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের সদস্য আল-আমীন ফরাজী। মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সেলিমের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল নেওয়াজ, মতলব পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান, চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি পিন্টু সাহা, নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন, দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাঈনউদ্দিন চৌধুরী, দাউদকান্দি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

চরশিলিন্দা গ্রামের চার-পাঁচজন বাসিন্দা বলেন, খিরাই নদের কারণে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর ও দক্ষিণ এবং দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ও আশপাশের আরও দু-একটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের যাতায়াতের কষ্ট ছিল। নদী পারাপারের একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হয় এলাকার লোকজনকে। তাঁরা আরও জানান, তাঁদের (চরশিলিন্দা) গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ব্যক্তিগতভাবে ওই নদের ওপর একটি কাঠের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ওই গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী তরুণ মো. আলম প্রধানকে সেতুটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এ কাজে এগিয়ে আসেন খোকন প্রধান, মো. জসিম উদ্দিন, আবুল কালাম, ইদ্রিস মিয়াসহ ওই গ্রামের আরও ২০-২৫ জন তরুণ। গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে সেতুটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়। মো. আনোয়ার হোসেন নামে ওই গ্রামের একজন কাঠমিস্ত্রির নেতৃত্বে ১০-১২ জন কাঠমিস্ত্রি সেতুর কাজ করেন। সেতু নির্মাণের আনুষঙ্গিক কাজে স্বেচ্ছাশ্রম দেন অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। গত মঙ্গলবার সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা।

সেতু স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. আলম প্রধান বলেন, তাঁর গ্রামের লোকেরা নিজেদের খরচ বাঁচিয়ে এবং বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থসহায়তা নিয়ে সেতুর নির্মাণসামগ্রী কেনেন। গ্রামবাসীরা দলে দলে ভাগ হয়ে পালাক্রমে সেতুর কাজ করেন।

নায়েরগাঁও উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, এ সেতু নির্মিত হওয়ায় মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর, নায়েরগাঁও দক্ষিণ ও খাদেরগাঁও এবং দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের আরও কয়েকটি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক লোকের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হবে। তাঁরা ওই সেতু দিয়ে অল্প সময় ও খরচে মতলব দক্ষিণ উপজেলা থেকে দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন।

দাউদকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল নেওয়াজ বলেন, এই সেতু নির্মিত হওয়ায় মতলব দক্ষিণ ও দাউদকান্দি উপজেলার মানুষের মধ্যে নতুন করে সেতুবন্ধ তৈরি হবে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শহীদুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে বেসরকারি পর্যায়েও ভালো কিছু করা সম্ভব। এ সেতু নির্মাণ এরই বাস্তব উদাহরণ। এর উদ্যোক্তারা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখেন।