৩৫ বছর পর মন্ত্রিবঞ্চিত

১৯৭৯ সালের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচিত সরকারের সময়ে বেড়া উপজেলার কেউ না কেউ মন্ত্রী হলেও এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে। তবে উপজেলার বাসিন্দা মির্জা আবদুল জলিল প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কর্মরত রয়েছেন। জানা যায়, বিগত মহাজোট সরকারে বেড়া উপজেলার এ কে খন্দকার পরিকল্পনামন্ত্রী ও শামসুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকারেও তাঁরা একই দায়িত্ব পালন করেন। এ কে খন্দকার স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ায় সবার ধারণা ছিল এ উপজেলা থেকে শামসুল হক টুকু নিশ্চিত মন্ত্রী হবেন।
জানা যায়, শামসুল হক টুকু ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শামসুল হক টুকু আবু সাইয়িদকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। নির্বাচনে সাইয়িদ ও তাঁর সমর্থকেরা টুকুর বিরুদ্ধে ভোট ডাকাতির অভিযোগ করেন। তাই শেষ পর্যন্ত টুকু মন্ত্রী না হওয়ায় টুকুর সমর্থকেরা হতাশ হলেও সাইয়িদ সমর্থকেরা উল্লসিত হন। টুকু মন্ত্রী না হওয়ায় তাঁর সমর্থকদের অনেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েন ও বাড়ি থেকে খুব একটা বের হননি। সাইয়িদ-সমর্থক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের উপজেলায় কে মন্ত্রী হলেন বা না হলেন, তার জন্য আমরা মিষ্টি বিতরণ করছি না। বিতরণ করছি আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুদ্দিন শরীফ ডিলু মন্ত্রী হওয়ায়।’ টুকুর সমর্থক বেড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘টুকু এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আরও উন্নয়ন ও এ এলাকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে তাঁর মন্ত্রিত্বের প্রয়োজন ছিল। তিনি মন্ত্রী না হওয়ায় এলাকাবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। আর তাঁর মন্ত্রী না হওয়ার খবরে যারা উল্লাস প্রকাশ করেছে, তারা মূলত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি। তারা এলাকার উন্নয়ন চায় না।’ এদিকে এ উপজেলা থেকে কেউ মন্ত্রী না হওয়ায় উপজেলার অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বেড়া পৌর এলাকার ট্রাকচালক জানে আলম বলেন, ‘সব সরকারের সময়েই আমরা মন্ত্রী পাই। কিন্তু এবার এ উপজেলার কেউ মন্ত্রী না হওয়ায় আমরা হতাশ।’ বেড়ায় প্রথম মন্ত্রী হন জয়নগর গ্রামের মির্জা আবদুল হালিম ১৯৭৯ সালে। তিনি জিয়াউর রহমান সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। এরশাদ সরকারের সময় নতুন ভারেঙ্গা গ্রামের এ কে খন্দকার পরিকল্পনামন্ত্রী ও নাকালিয়া গ্রামের মনজুর কাদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া সরকারের সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী হন ঘোপসেলন্দা গ্রামের ওসমান গণি খান (ওজি খান)। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী হন বৃশালিখা মহল্লার আবু সাইয়িদ। তারপর চারদলীয় সরকারের (২০০১-০৬) মন্ত্রী হন পাবনা-১ আসনের (সাঁথিয়া ও বেড়ার একাংশ) তৎকালীন সাংসদ মতিউর রহমান নিজামী। বিগত মহাজোট সরকারে এ কে খন্দকার পরিকল্পনামন্ত্রী ও বৃশালিখা মহল্লার শামসুল হক টুকু স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।