আশিয়ান সিটি প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা

রাজধানীর উত্তরায় আশিয়ান ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের আশিয়ান সিটি প্রকল্প (দক্ষিণখান, আশকোনা ও শিয়ালকাটা) অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া ছাড়পত্র বেআইনি ঘোষণা করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে এ রায় দেন।
রায়ের পর রিট আবেদন-কারীদের আইনজীবী ইকবাল কবির প্রথম আলোকে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে আদালত রুল মঞ্জুর করে আশিয়ান সিটি প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ফলে এ প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। আর জলাশয় ভরাট করে পরিবেশের ক্ষতি করায় আশিয়ান সিটিকে করা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বহাল থাকবে।
এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর রিট করে।
এতে বলা হয়, আশিয়ান সিটি ৪৩ দশমিক ১১ একর জমির জন্য অনুমোদন নিয়েছে। কিন্তু ২৩০ দশমিক ৪৬ একর জমিতে কাজ করছে। যে জমি ভরাট করছে, তা প্লাবনভূমি।
প্রাথমিক শুনানির পর গত বছরের ২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ আশিয়ান সিটি আবাসন প্রকল্পের মাটি ভরাট, বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্লট বিক্রি বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে রাজউকসহ বিবাদীদের নির্দেশ দেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্র, এর নবায়ন, রাজউকের অনুমোদন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা হ্রাস করে পাঁচ লাখ টাকা করা নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া আদেশ স্থগিত করা হয়। রুলে ওই প্রকল্পকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দেওয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র ও এর নবায়ন, মন্ত্রণালয় থেকে জরিমানা হ্রাস এবং রাজউকের দেওয়া অনুমোদন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
জলাশয় ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আশিয়ান সিটিকে করা অধিদপ্তরের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা কমিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।
তবে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ তা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তি করতে পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেন।
পরে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। একপর্যায়ে রিট আবেদনকারী পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ জুন প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করেন। এ বেঞ্চে রুলের ওপর গত ৩ অক্টোবর শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে আদালত রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। গতকাল রায় দেওয়া হয়।
রিটের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম, ফিদা এম কামাল, এ এম আমিনউদ্দিন, সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ইকবাল কবির। আশিয়ান সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান খান। রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়।