ত্রাণ নয়, নিরাপত্তা চায় ওঁরা

দিনাজপুরের কর্নাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। ছবি: প্রথম আলো
দিনাজপুরের কর্নাই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর সদর উপজেলার কর্ণাই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ত্রাণ চায় না, তারা চায় জীবনের নিরাপত্তা। আজ শনিবার দিনাজপুরের কর্ণাই গ্রামের তেলীপাড়া, সাহাপাড়া, প্রীতমপাড়া, অজয়পাড়াসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিশিষ্টজনেরা এ মন্তব্য করেন।

‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান বলেন, কর্ণাই গ্রামে এসে নির্যাতনের শিকার মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল নির্বাচনের দিন কী ধরনের ভয়াবহতা তাদের ওপর নেমে এসেছিল। এখানকার মানুষ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন যাপন করছে। বর্তমানে তাদের নিরাপত্তা দিতে সাময়িক সময়ের জন্য পুলিশ ক্যাম্প আছে। কিন্তু এই ক্যাম্প উঠে গেলে পরিস্থিতি কী হবে তা অনিশ্চিত। তবে নির্বাচনী ব্যস্ততা কাটিয়ে উঠেছে পুলিশ। তাই পুলিশ এখন তাদের নিরাপত্তায় মনোযোগ দিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হবে বলে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে।

রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ সংগঠনের সমন্বয়ক এবং আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, নির্যাতনের শিকার কর্ণাই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো একসময় অবস্থাপন্ন ছিল। তারাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। ক্ষমতাশালী। শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিকভাবে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। সেটেলররা এলাকার খাসজমি দখল করে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এরা সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন।

সুলতানা কামাল বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। কয়েকজনের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একজনের ফাঁসি হয়েছে। সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হামলাকারীরা এখানকার হিন্দু সংখ্যালঘুদের হুমকি দিয়ে বলেছে, ‘আর একজনের ফাঁসি দেওয়া হলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও ছায়ানটের সহসভাপতি সারোয়ার আলী বলেন, এরা ত্রাণ চায় না। নিরাপত্তা চায়। এই নিরাপত্তা দীর্ঘমেয়াদি হতে হবে। পুলিশ বা প্রশাসনের ওপরে ভরসা করে থাকলে চলবে না। এলাকার রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তিকে এদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে।

সারোয়ার আলী আরও বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনে হয়েছে, দিনাজপুর সদর উপজেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, এটা তারা ভাবতে পারেনি। তারা ব্যস্ত ছিল দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর) আসন নিয়ে। এ সুযোগে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা নির্বিঘ্নে এ ঘটনা ঘটাতে পেরেছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সাংসদ ইকবালুর রহীম ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।