'খ' শ্রেণিতে পুনর্বহালসহ তিন দফা দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ রেলস্টেশনকে ‘খ’ থেকে ‘ঘ’ শ্রেণিতে অবনমনের প্রতিবাদে গতকাল আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী l ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ রেলস্টেশনকে ‘খ’ থেকে ‘ঘ’ শ্রেণিতে অবনমনের প্রতিবাদে গতকাল আশুগঞ্জ গোলচত্বর এলাকায় মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী l ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ রেলস্টেশনকে ‘খ’ শ্রণি থেকে ‘ঘ’ শ্রেণিতে অবনমনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি তারা রেলস্টেশনটি ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত করাসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা জাগ্রত আশুগঞ্জবাসী নামের একটি সংগঠন এই কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশুগঞ্জ এলাকায় নির্মাণাধীন দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু থেকে ডাবল লাইনে যাওয়ার ক্রসিং লাইন সংযুক্তকরণের সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এতে দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু উদ্বোধন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রেলস্টেশন নিয়ে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত সব কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানান এলাকাবাসী।

গতকাল সকালে উপজেলার হাজী আবদুল জলিল উচ্চবিদ্যালয়, রওশন আরা জলিল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আলাল শাহ উচ্চবিদ্যালয়, ফিরোজ মিয়া কলেজ, আব্বাস উদ্দিন খাঁ ডিগ্রি কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন মিছিল নিয়ে আশুগঞ্জ গোলচত্বরে মিলিত হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লোকজন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ থানা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে মানববন্ধন করে। মানববন্ধনে তিন সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়।

মানববন্ধনে জাগ্রত আশুগঞ্জবাসীর আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন সংগঠনটির সদস্যসচিব ঈসা খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাছের আহমেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক শাহীন সিকদার, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহেনা বেগম, চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন খন্দকার, আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে আশুগঞ্জ রেলস্টেশনকে ‘খ’ শ্রেণিতে পুনর্বহাল, মূল নকশা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী স্টেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি জানান। এই তিন দফা দাবিতে ৩১ জুলাই আশুগঞ্জে সর্বাত্মক হরতালের ঘোষণা দেন বক্তারা।

জাগ্রত আশুগঞ্জবাসীর আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়া বলেন, ৩১ তারিখের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো মানা না হলে দাবি আদায়ে আমরা যেকোনো সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজনে আমাদের দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।

গতকাল মানববন্ধন শেষে জাগ্রত আশুগঞ্জবাসীর সদস্যরা দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতু প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন। সংগঠনের তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত রেলসেতু ও এর আশপাশের এলাকায় সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন তাঁরা।

দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হাই বলেন, ‘কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। অচিরেই কাজ শুরু করার জন্য আমরা চেষ্ট করছি।’

আশুগঞ্জ রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল, চট্টগ্রাম মেইল, নোয়াখালী এক্সপ্রেস, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, সুরমা এক্সপ্রেস, আখাউড়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তিতাস এক্সপ্রেস, ডেমু ট্রেন যাত্রাবিরতি করে। ‘খ’ থেকে ‘ঘ’ শ্রেণিতে পরিবর্তন করা হলেও এখানে আগের মতো সব ট্রেনই যাত্রাবিরতি করবে। শুধু সিগন্যালিং সিস্টেম এবং স্টেশনমাস্টার এখানে থাকবেন না। ‘ঘ’ শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়ার কারণে শুধু টিকিট বুকিং অফিস ছাড়া আর কিছুই থাকবে না স্টেশনটিতে। তবে যাত্রীরা আগের মতো সব ট্রেনেই যাতায়ত করতে পারবে।

এ বিষয়ে স্টেশনমাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, যেসব স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থা থাকে না, শুধু মালামাল ও যাত্রী ওঠা-নামার ব্যবস্থা থাকে, সেগুলোকে ‘ঘ’ শ্রেণির স্টেশন বলা হয়। সেই সব স্টেশনে দায়িত্বরত একজন বুকিং সহকারী ইনচার্জ থাকবেন। দুটি আন্তনগরসহ সব মেইল ট্রেন এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। ‘খ’ বা ‘ঘ’ শ্রেণির স্টেশন ট্রেন পরিচালনার পদ্ধতি মাত্র। আশুগঞ্জ রেলস্টেশনে সিগন্যালিং পদ্ধতি বসানোর কোনো জায়গা নেই। তাই এই স্টেশনকে ‘ঘ’ শ্রেণিতে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর আগে ৩ জুলাই আশুগঞ্জ রেলস্টেশনকে ‘খ’ গ্রেড থেকে ‘ঘ’ গ্রেডে অবনমনের প্রতিবাদে জাগ্রত আশুগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে রেলপথমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ জুলাই সমাবেশ করে রেলের মহাপরিচালক এবং আশুগঞ্জ রেলসেতু প্রকল্প পরিচালকের আপসারণ দাবি করা হয়।

সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৫ জুলাই সকাল ১০টায় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অবস্থান ধর্মঘট, ৩১ জুলাই সোমবার আশুগঞ্জে সর্বাত্মক হরতাল এবং রেলপথ, সড়কপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।