বৃষ্টি নেই, তবু জলাবদ্ধতা!

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকা। পানি ঢুকেছে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানে। এর মধ্যেই চলছে বেচাকেনা। ছবিটি গতকাল বেলা দুইটায় নগরের আগ্রাবাদের বেপারিপাড়া থেকে তোলা l জুয়েল শীল
জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকা। পানি ঢুকেছে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানে। এর মধ্যেই চলছে বেচাকেনা। ছবিটি গতকাল বেলা দুইটায় নগরের আগ্রাবাদের বেপারিপাড়া থেকে তোলা l জুয়েল শীল

ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল। দিনভর আকাশে মেঘ-সূর্যের লুকোচুরি চলেছে। তবে শেষ পর্যন্ত গতকাল শুক্রবার ভারী বৃষ্টি হয়নি চট্টগ্রামে। এরপরও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পায়নি নগরের আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, চকবাজারসহ অন্তত ১৫টি এলাকার বাসিন্দারা। সকাল হতেই এসব এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। দুপুরের দিকে কোথাও গোড়ালি, কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোথাও কোমরপানি জমে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে লোকজন।

জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বেপারিপাড়া, খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেট এলাকা, চান্দগাঁও, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, চকবাজার কাঁচাবাজার, কে বি আমান আলী রোড, সৈয়দ শাহ রোড, বাকলিয়া, ডিসি রোড, আবদুল লতিফ রোড, চান মিয়া মুনশি লেন, পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোড, নজু মিয়া লেন এলাকার বাসিন্দারা। বিকেল পাঁচটার দিকে পানি নেমে যায়। তিন থেকে চার দিন ধরে জোয়ারের পানিতে এসব এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সমস্যা অবশ্য নতুন নয়, প্রায় ১৫ বছর ধরে জোয়ারের জলাবদ্ধতায় ভুগছেন তাঁরা।

বেপারিপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল উদ্দিনের বাসায় গত চার দিন জোয়ারের পানি ঢুকছে। এ কারণে ভবনের দোতলায় প্রতিবেশীর বাসায় রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে তাঁর স্ত্রীকে। ইকবাল উদ্দিন বলেন, পানির কারণে ঘরে থেকেও শান্তি নেই।

গতকাল বেলা দুইটার দিকে আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কে হাঁটুপানি ছিল। এ সড়কে রিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের পাশের এলাকা বেপারিপাড়ার বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও জোয়ারের পানি ঢোকে।

আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের পাশের ডায়মন্ড ফার্নিসিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক শম্ভু দে প্রথম আলোকে বলেন, পানি মাড়িয়ে লোকজন দোকানে আসে না। তাই মাসের মধ্যে কয়েক দিন বেচাকেনা থাকে না।

২০১৫ সালের অক্টোবরে মহেশখালের ওপর অস্থায়ী বাঁধ দেওয়ার পর আগ্রাবাদের বাসিন্দাদের জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির পানি ওই বাঁধের কারণে নামতে না পারায় আবারও একই ভোগান্তি দেখা দেয়। ‘গলার কাঁটা’ এ অস্থায়ী বাঁধ গত মাসে অপসারণ করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির পানি থেকে মুক্তি মিললেও আবার জোয়ারের পানির কবলে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

জোয়ারের পানির কারণে আগ্রাবাদের অন্তত ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আগ্রাবাদ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত করে শুক্রবার (গতকাল) সকালে নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকালও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালমা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, এত বেশি জোয়ারের পানি উঠেছে যে শনিবারের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। খুদে বার্তার মাধ্যমে তা অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর সড়কের বাসিন্দা খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতার সময় কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার উপায় পর্যন্ত থাকে না।

আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের মতোই ভুগতে হচ্ছে বাকলিয়ার মানুষকেও। বাকলিয়া ডিসি রোড ও আবদুল লতিফ রোড এলাকায় গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জোয়ারের পানি উঠতে শুরু করে। বেলা দেড়টার দিকে এসব এলাকায় হাঁটুপানি হয়। ওই পানি মাড়িয়েই চলাচল করতে হয় লোকজনকে। এলাকার দোকানগুলো খোলা থাকলেও ক্রেতা ছিল খুব কম। পরে বিকেলের দিকে পানি নেমে যায়।

ডিসি রোডের মিলন ফার্মেসির মালিক দুলাল সেন প্রথম আলোকে বলেন, জোয়ারের পানি উঠলে কষ্টের সীমা থাকে না। দোকান থেকে পানি বের করতে অনেক সময় লাগে। পানির কারণে মানুষও দোকানে আসে না।

জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতার শিকার দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়া মার্কেট এলাকায় গতকালও পানি উঠেছে।

নগরের খাল, নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি এবং জলাধার, জলাশয় ও নিচু এলাকা ভরাট করে ভবন নির্মাণের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগ্রাবাদ ও বাকলিয়া এলাকায় একসময় বিল ছিল। তখন কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি বিভিন্ন খালের মাধ্যমে প্রবেশ করে এসব বিলে নেমে যেত। কিন্তু বিল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করায় পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। পানি এখন রাস্তাঘাট ও লোকালয়ে প্রবেশ করছে।