সড়কে খানাখন্দ, দুর্ভোগের শেষ নেই

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক-সংলগ্ন সড়কটির কোথাও কোথাও পিচ ঢালাইয়ের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ছবি: বাকি বিল্লাহ্
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক-সংলগ্ন সড়কটির কোথাও কোথাও পিচ ঢালাইয়ের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ছবি: বাকি বিল্লাহ্

এটা জেলা, উপজেলা শহর বা মফস্বল এলাকার সড়ক নয়। এটি রাজধানী ঢাকায়। সড়কের একপাশে পরিকল্পনা কমিশন ও আরেক পাশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক এ সড়কেই।

এ সড়কের কোথাও কোথাও দেখতে চষা জমির মতো। পিচ ঢালাইয়ের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। কোনো কোনো স্থান ভেঙে খাদের মতো হয়ে আছে। প্রায়ই এই খাদে পড়ে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। ২৪ জুলাই একটি মিনিট্রাক এখানে আটকে যায়। শ্রমিকেরা আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে যানটি তুলতে সক্ষম হন। কখনো কখনো অটোরিকশা খাদে পড়ে উল্টে যাচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। বেহাল এ সড়কের বিষয়ে কথা বলার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক-সংলগ্ন সড়কটিতে আটকে পড়া একটি গাড়ি তোলার চেষ্টা করছেন কয়েকজন। ছবি: বাকি বিল্লাহ্
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক-সংলগ্ন সড়কটিতে আটকে পড়া একটি গাড়ি তোলার চেষ্টা করছেন কয়েকজন। ছবি: বাকি বিল্লাহ্

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বেশ কয়েকবার মৌখিকভাবে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সৈয়দ আনোয়ারুল ইসলামকে সড়কটি সংস্কার করার জন্য অনুরোধ করেছেন। গত মাসে তাঁরা লিখিতভাবে বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর ল্যান্ডফোনে ফোন করা হলে তাঁকেও পাওয়া যায়নি। উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফ হোসেন বলেন, ‘সড়কটি মেগা প্রজেক্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন হলে কাজ হবে। বৃষ্টি কমলে ইট-খোয়া ও বালু ফেলে সাময়িকভাবে এটি যান চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে।’

সড়কের পাশের এক দোকানি জাহানারা বেগম জানান, প্রায় তিন মাস ধরে বেহাল এই সড়কটি। মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য বেগম রোকেয়া সরণির সড়ক কেটে রাখায় অনেক যানবাহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। ফলে এই সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ায় সড়কটি এতটা খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।

গর্তে পড়ে বিকল হয়ে পড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ওপরে তোলার চেষ্টা করছেন গাড়িটির চালক। ছবি: বাকি বিল্লাহ্
গর্তে পড়ে বিকল হয়ে পড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ওপরে তোলার চেষ্টা করছেন গাড়িটির চালক। ছবি: বাকি বিল্লাহ্

সিএনজিচালিত অটোরিকশার এক চালক বলেন, খাদে পড়ে গেলে পানি ঢুকে অনেক সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। তখন ঠেলে গর্ত থেকে গাড়ি তুলতে তাঁদের খুবই কষ্ট হয়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা অনুষদের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদ মোহাম্মদ বলেন, ‘এই সড়কের কারণে আমাদের দুর্গতির কোনো শেষ নেই। আমরা ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, আমরা যেন কোনো গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি। মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে সব গাড়ি এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর এই সড়ক আরও বেহাল হয়ে পড়েছে। এ সড়কের আশপাশেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। অথচ মনে হয়, এটাই ঢাকা শহরের সবচেয়ে খারাপ সড়ক।’

আরেক ছাত্র ওয়াসিফ বলেন, ‘ছেলেদের হলগুলোতে যেতে হলে এই সেকেন্ড গেট দিয়ে বের হতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারী তৌহিদ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। তিনি বলেন, সড়ক খারাপ হওয়ায় মানুষ ঠিকমতো অফিসে আসা-যাওয়া করতে পারছে না। গত মাসে এখানে একটি মাইক্রোবাস আটকে প্রায় দুই দিন পড়ে ছিল। এখন প্রায় প্রতিদিন একটি-দুটি গাড়ি আটকে যায়।