জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত

>

নারায়ণগঞ্জ সদরের লামাপাড়া, রামারবাগ, সেহাচর, দক্ষিণ সস্তাপুর, জেলা পরিষদসংলগ্ন পূর্ব ইসদাইর, কোতালেরবাগ, লালপুর, তল্লা, কুতুবপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী, মিজমিজি দক্ষিণপাড়া, বাতেনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের অভ্যন্তরের মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পানিতে ডুবে গেছে এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বিভিন্ন স্থান হাঁটুপানি থেকে কোমরপানিতে ডুবে গেছে। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার লামাপাড়া, রামারবাগ, সেহাচর, দক্ষিণ সস্তাপুর, জেলা পরিষদসংলগ্ন পূর্ব ইসদাইর, কোতালেরবাগ, লালপুর, তল্লা, কুতুবপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী, মিজমিজি দক্ষিণপাড়া, বাতেনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা দুই থেকে তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অনেককে মালামাল নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী জানান, ডিএনডি বাঁধের ভেতরে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। কিন্তু দেড় দুই মাস ধরে তারা পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। পানিতে তলিয়ে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের সরকারি খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে।

লামাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জোনায়েদ আহম্মেদ বলেন, এবার ডিএনডিতে রেকর্ড জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো অবস্থাতেই ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই। মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানির উচ্চতা বাড়ছে। ঘরে পানি ওঠায় থাকা যাচ্ছে না।

জেলা পরিষদসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জোবায়দা ও আনোয়ারা আক্তার বলেন, পূর্ব ইসদাইরের সঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সংযোগ সড়কটি কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। আশপাশের এলাকার বাড়িঘরেও দুই থেকে আড়াই ফুট পানি উঠে গেছে। রান্নাঘর ডুবে গেছে। বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি তোলার মটরও ডুবে গেছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ফজলুল হক বলেন, মিজমিজি দক্ষিণপাড়ায় ঘরে ঘরে পানি। রাস্তাঘাটও পানির নিচে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে কৃত্রিম বন্যার আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

শিমরাইল পাম্প হাউসের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল জব্বার বলেন, ডিএনডির প্রধান ক্যানেলে (খাল) পানি বিপৎসীমার আড়াই ফুট ওপরে রয়েছে। বাঁধের ভেতরের পানি নিষ্কাশনে ৫১২ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি এবং ৫ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫টি পাম্প দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীতে পানি ফেলা হচ্ছে। কিন্তু পাম্পগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় এর কার্যক্ষমতা কমে গেছে। তিনি বলেন, ডিএনডির অভ্যন্তর থেকে ৩০০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করতে পারলে জলাবদ্ধতা থাকবে না। এ পাম্প হাউসে মাত্র ৬০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করার ব্যবস্থা আছে।