উপজেলা নির্বাচনে থাকার কথা ভাবছে বিএনপি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বিএনপি। অংশ নেওয়ার বিষয়ে চাপও আসছে তৃণমূল থেকে। দলের শীর্ষ পর্যায়েও নির্বাচনে থাকার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি।
নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক হলেও ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে, তাও বিবেচনা করছেন বিএনপির নেতৃত্ব।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও এর আগে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের আমলের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে প্রার্থী হন দলীয় নেতারা।
আজ রোববার নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপে ১০২টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ধাপে ধাপে সব কটি উপজেলায় নির্বাচন করা হবে।
জাতীয় নির্বাচন বর্জন করার পর স্থানীয় এসব নির্বাচনে বিএনপি থাকবে কি না জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ‘প্রথম আলো’কে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবুও দলীয় সমর্থন থাকে। এবারের স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন থাকবে কি না, তা নিয়ে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিএনপি নির্বাচনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন খুবই প্রশ্নবিদ্ধ। এর অধীনে কতটুকু সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এসবও বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে দলে এখন পর্যন্ত দুই ধরনের মত আছে। বিএনপি মনে করছে, উপজেলা নির্বাচনের তোড়জোড় সরকারের একটি নতুন কৌশল। বিএনপিকে আন্দোলন থেকে পিছু হটাতে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এ ফাঁদে পা দেওয়া ঠিক হবে না। আবার কারও কারও মতে, স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে মাঠ ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে সমর্থন দেওয়া উচিত হবে।
উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে বিএনপির দলীয় সূত্রগুলো জানায়। কারণ, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নিতে চান। শীর্ষ পর্যায়েও এটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচনে থাকার মাধ্যমে তৃণমূলের কর্মীদের আরও বেশি চাঙা রাখা যাবে বলে মনা করা হচ্ছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো এবার উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তৃণমূল থেকে নির্বাচনের জন্য চাপ আছে। জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় নির্বাচনও বর্জন করলে তৃণমূলে হতাশা বেড়ে যাবে। নির্বাচনে গেলে বিএনপি জিতবে। তাই আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া ঠিক হবে না বলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন।
অন্যদিকে আরেকটি মত হলো, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকেই বলে আসছে এই নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন বিএনপি বলছে, একতরফা দশম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের এই বক্তব্য প্রমাণিত হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যের পর আবার এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ভুল হবে কি না, তাও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।