দেশি ট্যাংরার রুপা জয়

প্রজননের আগে ট্যাংরা মাছকে ইনজেকশন প্রয়োগ। ছবি: সংগৃহীত
প্রজননের আগে ট্যাংরা মাছকে ইনজেকশন প্রয়োগ। ছবি: সংগৃহীত

ট্যাংরা মাছের নাম শুনলে যেকোনো ভোজনরসিকের জিবে পানি এসে যায়। সুস্বাদু মাছটি রান্না করা যায় নানা উপায়ে। পেঁয়াজ-কুচি, কাঁচা মরিচ দিয়ে ট্যাংরা মাছ চচ্চড়ির জুড়ি নেই। ট্যাংরা মাছের ঝোলের স্বাদ অনন্য। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীতে পাওয়া যায় নোনা ট্যাংরা। তবে মিঠা পানির দেশি ট্যাংরা হলে স্বাদ আরও বেশি।

পুকুর, খাল-বিল, ডোবার সংখ্যা কমে যাওয়ায় দেশি ট্যাংরা প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। বাজারে কালেভদ্রে অল্পস্বল্প মিললেও দাম বেশ চড়া। কিন্তু হারানো ট্যাংরা মাছের প্রজাতিকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশি ট্যাংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের কৌশল উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী। ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খোন্দকার রশীদুল হাসানের নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন ও শওকত আহম্মেদ এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

ট্যাংরার পোনা। ছবি: সংগৃহীত
ট্যাংরার পোনা। ছবি: সংগৃহীত

এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন ১২ জুলাই দৈনিক প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে প্রকাশিত হয়। এর সাত দিন পর ১৯ জুলাই দেশি ট্যাংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও চাষের কৌশল উদ্ভাবনের সাফল্যে সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রকে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে রৌপ্যপদক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রের ১৫টি পুকুরে মাগুর, শিং, কই, রুই, কাতলা, জেনেটিক্যালি ইমপ্রুভড তেলাপিয়া, সরপুঁটি, ট্যাংরা, ভেদা, শোল, টাকি, খলিশা, গুতুমসহ নানা রকম মাছের জাত ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন রশীদুল হাসান, মালিহা হোসেন ও শওকত আহম্মেদ। দীর্ঘ গবেষণার পর প্রথমবারের মতো দেশি ট্যাংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষের কলাকৌশল উদ্ভাবন করেন তাঁরা। গত জুনে এই প্রযুক্তি মৎস্য মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ডিম সংগ্রহের আগে একটি ট্যাংরা মাছ। ছবি: সংগৃহীত
ডিম সংগ্রহের আগে একটি ট্যাংরা মাছ। ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতির পরিবেশে বেড়ে ওঠা ট্যাংরার সঙ্গে কৃত্রিম প্রজননের ট্যাংরার স্বাদে পার্থক্য হবে না—এমন দাবি খোন্দকার রশীদুল হাসানের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো আকারের জলাধারে দেশি ট্যাংরা মাছ চাষ করা যাবে। তবে ১০ থেকে ১৫ শতক আয়তনের ছোট পুকুরে চাষ করা গেলে উৎপাদন ভালো হবে। ডিম ফুটে পোনা বের হওয়ার ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে এই ট্যাংরা খাওয়ার উপযোগী হবে। এ ক্ষেত্রে চাষ পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা মানসম্পন্ন হতে হবে। ৪০-৫০টি ট্যাংরা মাছের ওজন হবে এক কেজি।

কতটুকু জায়গায় কী পরিমাণ দেশি ট্যাংরা মাছের উৎপাদন যাবে, পুকুরে অন্য কোনো মাছের সঙ্গে মিশ্র পদ্ধতিতে এটি চাষ করা যাবে কি না—এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আগস্ট মাসের মধ্যে এর ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন রশীদুল হাসান।

কৃত্রিম প্রজননে চাষ করা ট্যাংরা মাছ। ছবি: সংগৃহীত
কৃত্রিম প্রজননে চাষ করা ট্যাংরা মাছ। ছবি: সংগৃহীত

চাষের আগে পুকুর শুকিয়ে নেওয়ার কথা জানান রশীদুল হাসান। তিনি বলেন, এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ট্যাংরা মাছের প্রজননকাল। এ সময় ৮-১০ গ্রাম ওজনের ট্যাংরা সংগ্রহ করে প্রস্তুত করা পুকুরে মজুত করে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্রুড তৈরি করা হয়। হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে ডিম থেকে রেণু পোনা তৈরি করে ১০ দিনের মধ্যে পুকুরে ছাড়া হয়। রেণু পোনা ছাড়ার আগে পুকুর শুকিয়ে প্রথমে প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে চুন প্রয়োগের পাঁচ দিন পর প্রতি শতাংশে ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫ গ্রাম ও গোবর চার কেজি ব্যবহার করা হয়। ব্রুড প্রতিপালন পুকুরের চারপাশে জালের বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। সেই সঙ্গে নির্দেশিকামতো খাবার দেওয়া এবং যত্ন নিতে হয়।