ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতি, তদন্ত করবে প্রশাসন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের লক্ষ্যে সিনেটের বিশেষ অধিবেশন চলার সময় ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী প্রথম আলোকে তদন্ত কমিটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আফতাব আলী শেখ ও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান।

তদন্ত কমিটিতে থাকা তিনজনই সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রক্টর আমজাদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, এর আগেও ছোটখাটো অনেক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু এবার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে যে ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে, তাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বহাল ছিল না। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটি করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য এই বিশেষ অধিবেশন বসে। সিনেটের মোট ১০৫ জন সদস্যের মধ্যে ৪৭ জন এই অধিবেশনে যোগ দেন। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রতিনিধিসহ ৫০টি পদ আগে থেকেই শূন্য ছিল।
আগামী ২৪ আগস্ট বর্তমান উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই তিনজনের মধ্য থেকে নতুন উপাচার্যকে বেছে নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তবে নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকেই।

২০১৩ সালের ২৪ আগস্টেও একইভাবে সিনেটে নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন আরেফিন সিদ্দিক। ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি সাময়িক নিয়োগ পান। এর সাড়ে চার বছর পর বিশেষ সিনেট অধিবেশন ডেকে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করেন। তখন সিনেটের সদস্য ছিলেন ৫০ জন।

গতকাল অধিবেশন শুরুর আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মল চত্বরের পাশে সিনেট ভবনের ফটকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানাতে থাকেন। এই পথ দিয়েই সিনেট সদস্যরা অধিবেশনে যাচ্ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা ফটকের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। বাইরে ছিলেন পুলিশের সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে কর্তৃপক্ষ ফটকে তালা লাগিয়ে দেয়।

শিক্ষার্থীরা ‘সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি কোথায়?’, ‘আগে ডাকসু পরে ভিসি’, ‘ছাত্র প্রতিনিধিবিহীন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন মানি না’ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন বহন করেন। তাঁরা প্রথমে ফেস্টুনগুলো ফটকে ঝুলিয়ে বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তাঁরা ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে যান। এ সময় শিক্ষকেরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

প্রক্টর আমজাদ আলী ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা মিলে শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে তুলে দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ে যান, এক শিক্ষক হাতের আঙুলে চোট পান। তাঁদের ফটকের বাইরে বের করে শিক্ষকেরা আবার ফটক বন্ধ করে দিতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের বাধায় পারেননি। পরে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভেতরে ঢুকে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা গত সাড়ে আট বছর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেও ডাকসু নির্বাচন না দেওয়ায় আরেফিন সিদ্দিকের কড়া সমালোচনা করেন। তাঁরা সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচনের পর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দাবি জানান। সিনেট অধিবেশন শেষ হলে শিক্ষার্থীরাও মানববন্ধন শেষ করে চলে যান। তাঁরা ‘হামলাকারী শিক্ষকদের’ বিচার দাবি করেন।