অপমান সইতে না পেরে মাদ্রাসাছাত্রীর আত্মহত্যা

>

ফাতেমার খাতার ভেতর থেকে গতকাল সকালে একটি চিঠি পাওয়া যায়। সে ওই চিঠিতে লিখেছে, একই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক ছাত্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষকদের অপমান সে সইতে পারেনি। এ কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় শিক্ষকদের অপমান সইতে না পেরে গত সোমবার মাদ্রাসাছাত্রী ফাতেমা আক্তার আত্মহত্যা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ফাতেমার এক চিঠি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ফাতেমা উপজেলার নিজ শেখ সুন্দর দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে ওই গ্রামের বটতলা এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওয়াহেদের মেয়ে।

এদিকে ফাতেমার খাতার ভেতর থেকে গতকাল সকালে একটি চিঠি পাওয়া যায়। সে ওই চিঠিতে লিখেছে, একই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির এক ছাত্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে শিক্ষকদের অপমান সে সইতে পারেনি। এ কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসার এক শিক্ষকের ছেলে একই মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। ফাতেমার সঙ্গে ওই শিক্ষকের ছেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এটি জানতে পেরে চটে যান ওই শিক্ষক (ছেলের বাবা)। ওই শিক্ষক মেয়েটিকে গালমন্দ করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেন। ঘটনার দিন গত শনিবার মাদ্রাসার অপর শিক্ষক মিনারুল ইসলাম ফাতেমাকে শিক্ষকদের কমন রুমে ডেকে গালমন্দের পাশাপাশি মারধরও করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ফাতেমা কাঁদতে কাঁদতে গত শনিবার মাদ্রাসা থেকে বাড়ি চলে আসে। ওই মাদ্রাসার সুপার আবদুর রাজ্জাক ও শিক্ষক মিনারুল কিছুক্ষণ পর ফাতেমার বাড়িতে আসেন। একপর্যায়ে শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে ফাতেমা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে গত রোববার পুলিশ ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার ফাতেমার লাশ দাফন করা হয়। পরে গতকাল সকালে ফাতেমার ওই চিঠি পাওয়া যায়।

ফাতেমার চাচা রঞ্জু মিয়া বলেন, ফাতেমার লেখা চিঠি দেখে এটা প্রমাণিত হয়েছে, শিক্ষকেরা তাকে মারধর ও প্রচণ্ড অপমান করে মাদ্রাসা থেকে বের করতে চেয়েছিলেন। ফাতেমা ওই অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

ফাতেমাকে গালমন্দ ও মারধর করার কথা সত্য নয় দাবি করে মিনারুল বলেন, ‘ফাতেমা কাউকে কিছু না বলে শনিবার দুটি ক্লাস করে বাড়িতে চলে যাওয়ায় তার খুঁজ নিতে রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।’

এ ব্যাপারে রাজ্জাক বলেন, ‘শনিবার দুটি ক্লাস করে ফাতেমা কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে চলে যায়। ফাতেমা না বলে চলে যাওয়ায় তার খোঁজ নিতে আমি মিনারুলকে নিয়ে তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম, এ সময় তাকে মাদ্রাসার দিকে ফিরে আসতে দেখে আমরাও মাদ্রাসায় চলে আসি। এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না।’

হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ফাতেমা আত্মহত্যার আগে কোনো চিঠিতে তার আত্মহত্যার কারণ লিখে গেলে মেয়ের পরিবার আদালতে মামলা করতে পারবে।