কাটা সড়কে কষ্টে চলাচল

আলমাস মোড় থেকে গোলপাহাড় মোড় পর্যন্ত মেহেদীবাগ সড়ক। দৈর্ঘ্য বড়জোর এক কিলোমিটার। নগরের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম এই সড়কের অন্তত সাতটি জায়গায় ১০-১২ ফুট করে কাটা। আবাসিক গ্যাস-সংযোগের জন্য সড়কের এই অংশগুলো কাটা হয়েছে। কিন্তু গ্যাস-সংযোগের কাজ শেষ হলেও কাটা অংশগুলো আর মেরামত তথা কার্পেটিং করা হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটের খোয়া আর বালু দিয়ে সড়কের কাটা অংশের গর্তগুলো যেনতেনভাবে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। তবে তা ইতিমধ্যে মূল সড়ক থেকে প্রায় পাঁচ-ছয় ইঞ্চি করে দেবে গেছে। রিকশা-অটোরিকশা বা রেইঞ্জারে চলাচল করতে গিয়ে এসব কাটা গর্তে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খেয়ে অনেক সময় যন্ত্রণাকাতর হয়ে ওঠে যাত্রীরা।

সড়কের দুই পাশে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সড়কের কাটা অংশগুলোয় প্রায় সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কে যান চলাচল করে অস্বাভাবিক ধীরগতিতে। এ কারণে যানজটের তীব্রতাও বেড়েছে। এতে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়।

আবদুল হালিম নামের এক রেইঞ্জারচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটু পরপর গর্ত। এ ছাড়া রয়েছে একাধিক গতিরোধক। এ সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালানোই মুশকিল।

অসুস্থ বড় ভাইকে নিয়ে মেহেদীবাগ সড়কসংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন মামুনুল ইসলাম। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সড়কেরই এমন হাল! রিকশা নিয়ে আসার সময় গর্তে ঝাঁকুনি খেয়ে শরীরে ভীষণ যন্ত্রণা পেলাম।’ মেহেদীবাগ সড়কের মত গ্যাস-সংযোগের জন্য কাটা পড়েছে নগরের বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। সংযোগের কাজ শেষ হলেও সড়কগুলো সংস্কার করেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে নগরবাসীর ভোগান্তি বেড়েছে। স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯-এর ৪৪ ধারার ১৮ উপধারা অনুযায়ী, নগরের সড়কগুলোর সংস্কারের দায়িত্ব করপোরেশনের।

জানা গেছে, গত বছরের ৭ মে আবাসিক গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সংযোগ কার্যক্রম শুরু হলে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়ে। কেজিডিসিএল ওই বছরের জুলাই মাসে নগরসহ জেলায় সংযোগ দেওয়া শুরু করে।

কেজিডিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক (বিতরণ) রেজাউল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত জুলাইয়ে আমরা গ্যাস-সংযোগ দেওয়া শুরু করি। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রায় ৫০ হাজার সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’

রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, গ্যাস-সংযোগের জন্য রাস্তা কাটার আগে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। আর কাটা রাস্তা সংস্কারের জন্য করপোরেশনের নির্ধারিত অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেহেদীবাগ সড়ক ছাড়াও কাজীর দেউড়ী, অক্সিজেন, প্রবর্তক মোড়, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস-সংযোগের জন্য রাস্তা কাটা হয়েছে। সংযোগের কাজ শেষে ইটের খোয়া আর বালু দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা কার্পেটিং করা হয়নি। জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস-সংযোগের জন্য সড়কের কাটা অংশগুলোর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কম হওয়ায় দ্রুত সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সামনে নগরের সড়ক সংস্কার ও কার্পেটিংয়ের সময় এগুলো একসঙ্গে মেরামত করা হবে। এ জন্য একটু সময় লাগছে।

করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এয়াকুব নবী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ জন গ্রাহক গ্যাস-সংযোগের জন্য রাস্তা কাটার অনুমতি নেন। এ জন্য তাঁদের করপোরেশন নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কাটা সড়কগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।