ব্যতিক্রমী আশ্রয়কেন্দ্র

সড়কের দুই পাশে সারি সারি দোকান। পশ্চিম পাশের দোকানগুলোর মাঝে হাত দশেকের মতো ফাঁকা জায়গা। সেখানে থাকা প্রবেশদ্বারটি দিনাজপুর একাডেমির। শহরের প্রাণকেন্দ্র মুন্সিপাড়ায় এর অবস্থান। রাত ১২টা ছুঁইছুঁই হলেও প্রতিষ্ঠানটির ভেতর থেকে অনেক মানুষের কথা কানে ভেসে আসছিল।

এই মানুষগুলো বানভাসি। বন্যা তাদের বাড়িছাড়া করেছে। বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই মিলেছে তাদের। একটা আশ্রয়কেন্দ্রের চেহারা কেমন হতে পারে? চোখ বন্ধ করেই কিছু কথা বলে দেওয়া যায়: স্যাঁতসেঁতে মেঝের ছোট ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে মানুষের বাস। বিদ্যুৎহীন ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর গরমের অত্যাচার। সব জায়গা ময়লা-আবর্জনায় একাকার। দুমুঠো খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর ওষুধের জন্য মানুষের হাহাকার।

কিন্তু ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দিনাজপুর একাডেমিতে গত মঙ্গলবার রাতে গিয়ে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেল। একাডেমির পুরোনো ‘এল’ আকৃতির ভবনের কক্ষগুলোর প্রতিটিই বিশাল আকারের। কমবেশি ৯০০ বর্গফুটের প্রতিটি কক্ষই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রতিটি কক্ষে ১০-১৫ জন করে থাকছে। ফলে বসবাসের পর্যাপ্ত জায়গা পাচ্ছে। নারী ও শিশুদের জন্যরাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত বাতি ও বৈদ্যুতিক পাখা রয়েছে। আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শৌচাগার।

এখানে আশ্রয় নেওয়া লিপি দত্ত (৩২) বলেন, ‘বানোত সব হারি এটে উঠার সময় ভাবছোনে কেঙ্কা থাকমো, কী খামো? ছোট ছোলটার কী হবি? উঠি আসি স্কুলের লোকগুলা খুব খোঁজখবর নেওচে। খাওয়ার কোনো কষ্ট নাই। দুবার ডাক্তার আসছিল। মনে হছি এটে থাকি যাও।’

আরেক কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি চিত্ত ঘোষ বানভাসি এসব মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। কার কী সমস্যা শুনছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় অন্তরকণ্ঠ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক রোস্তম আলী এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আনিস হোসেন।

আনিস হোসেন বলেন, ‘আমরা নিজেরা যেভাবে থাকি, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের সেভাবেই রাখার চেষ্টা করেছি। শুধুই খিচুড়ির পরিবর্তে শিশুদের জন্য আলাদা খাবারসহ প্রতিদিন স্বাভাবিক খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কথা বলতে বলতে ওই কক্ষে প্রবেশ করলেন সেনাবাহিনীর দুই সদস্য। তাঁরা সার্বিক খোঁজখবর নিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বললেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের সার্বিক চিত্র জানার চেষ্টা করছেন তাঁরা। সেই উদ্দেশ্যেই দিনাজপুর একাডেমিতে তাঁদের আগমন।

দিনাজপুর একাডেমিতে বানভাসি ৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রটির সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীও।