'আউটলেট' দিয়ে পানি ঢুকে ৫ ওয়ার্ড প্লাবিত

ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ শহররক্ষা বাঁধের বাইরে পানি বের করে দেওয়ার নালা (আউটলেট) দিয়ে পানি ঢুকে পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই সব এলাকার ৩০ হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

নদীতে পানি ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য শহররক্ষা বাঁধে নির্মিত ইনলেট-আউটলেটগুলো অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করায় এগুলো শহরবাসীর কোনো কাজে আসছে না বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহররক্ষা বাঁধের প্রায় সব কটি আউটলেট দিয়ে শহরের নালায় পানি ঢুকে পৌরসভার ১, ২, ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট সব পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে বাসাবাড়িতে হাঁটুপানি। শহরের বাণিজ্যিক এলাকা গোডাউনপাড়া ও কাপড়পট্টি, শহরের সুপারিপট্টি, কালীতলা, সুলতানপুর, কাচারিপাড়া, উকিলপাড়া, আলুপট্টি, বাঙ্গাবাড়িয়া, কলেজপাড়া, মাস্টারপাড়া, কাজিপাড়া, পার-নওগাঁ ধোপাপাড়া ও নামাজগড় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে শহরের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

শহরের গোডাউনপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মনোজিৎ কুমার বলেন, ‘গুদামে তাঁর ৫০ মণ পেঁয়াজ রাখা ছিল। গত রাতে গুদামের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। রাতের মধ্যে ৩০ মণের মতো পেঁয়াজ সরাতে পারলেও বাকি পেঁয়াজ ভিজে গেছে।’

শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় নদীতে একটু পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধের আউটলেট দিয়ে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এবার তো পুরো উকিলপাড়া এলাকা তলিয়ে যাওয়ার অবস্থা। বাসাবাড়িতে হাঁটুপানি।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নওগাঁ শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর আওতায় ছিল শহররক্ষা বাঁধের ওপর ফ্লাড ওয়াল, নদীতে পানি ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ৯০টি আউটলেট-ইনলেট তৈরি।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, শহররক্ষা বাঁধের আউটলেট-ইনলেটগুলো অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করায় নদীর পানি শহরে ঢুকে শহর প্লাবিত হচ্ছে।

নওগাঁ পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী গুরুদাস দত্ত বলেন, ‘আউটলেটগুলো স্লুইচগেট আকারে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এগুলো সেভাবে করা হয়নি। এ কারণে আউটলেটগুলো দিয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। নদীতে পানির যে বেগ ও আউটলেট দিয়ে যেভাবে পানি ঢুকছে তাতে যেকোনো মুহূর্তে শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবছর বাঁধ সংস্কারে বরাদ্দ এলেও পাউবো কাজই করে না। এ জন্য বাঁধের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।’

তবে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যথাযথ নকশা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী আউটলেট-ইনলেটগুলো তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলোতে ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে। জায়গা শনাক্ত করে দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রতিবছরই জেলার চারটি প্রধান নদীর কোথাও না কোথাও সংস্কারকাজ হয়। তবে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন বরাদ্দ পর্যাপ্ত না পাওয়ায় সেভাবে করতে পারি না।’