'রাজনৈতিক দলের মধ্যে মধ্যস্থতা ইসির কাজ না'

নির্বাচন কমিশন ভবন মিলনায়তনে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনাররা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
নির্বাচন কমিশন ভবন মিলনায়তনে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনাররা। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক অনেক মধ্যস্থতাকারী এসেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা করাতে পারেনি। তাই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা আমরা নিতে চাই না।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের কারও কাছে যাওয়ার দরকার নেই। ইসি একটি স্বাধীন সত্তা। আমরা শপথ নিয়েছি, কারও চাপে নতিস্বীকার করব না। কারও কাছে যাব না। এটাই যথেষ্ট। তা ছাড়া আমাদের এখানে আন্তর্জাতিক অনেক মধ্যস্থতাকারী এসেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা করাতে পারেনি। তাই মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা আমরা নিতে চাই না, এটা আমাদের কাজও নয়। ইসি এ উদ্যোগ নেবেও না।’

গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপ শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘এটি কমিশনের সিদ্ধান্ত। যদি পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে করি সেনাবাহিনী দরকার আছে, তাহলে থাকবে।’

এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় নির্বাচন কমিশন ভবন মিলনায়তনে কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা সংলাপে অংশ নেন। এতে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের ২৬ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।

সংলাপ শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা অনুকূল ও আস্থাশীল অবস্থানে আছি। কেউ আমাদের বিরক্ত করেনি। কমিশনে কেউ তার দাবিদাওয়া নিয়ে আসেনি। আমরা এখন পর্যন্ত আস্থাশীল আছি এবং থাকব।’ নির্বাচনের সময় কী ধরনের সরকার থাকবে, সে ব্যাপারে কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই বলে মনে করেন সিইসি। নির্বাচনের আগে যে সরকার বর্তমান থাকবে, সেই সরকারব্যবস্থার অধীনেই নির্বাচন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সিইসি নুরুল হুদা আরও বলেন, ‘সবকিছু নির্ভর করে সরকার কোন ধরনের পরিবেশ ঠিক করে দেয়। এখন এই সরকারের অধীনে যে অবস্থা আছে, সেভাবে নির্বাচন করতে হলে আমরা সেটি করব। আর যদি সরকার পরিবর্তন করে তাহলে সেভাবে হবে। কাজেই নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকার থাকবে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়। আমরা তা নির্ধারণ করতে পারিও না।’

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইসি অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কারও প্রতি আমাদের দুর্বলতা নেই বা কারও প্রতি কোনো শত্রুতা নেই। একই সঙ্গে কারও প্রতি কোনো আকর্ষণ-বিকর্ষণও নেই। আমাদের আকর্ষণ-বিকর্ষণ যা-ই বলেন, সেটা রয়েছে নির্বাচনী আইনের প্রতি। এ জন্যই আমরা আপনাদের (গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের) বিরক্ত করছি। আমরা আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন চাই।’

সিইসি কে এম নুরুল হুদার পর আজ গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে দ্বিতীয় ও শেষ দিনের সংলাপ শেষে নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের কাছে আজকের সংলাপে আলোচ্য বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের কাছে পাওয়া সুপারিশগুলো তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তুলে ধরবেন। এ ছাড়া আগামী ২৪, ২৮ ও ৩০ আগস্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হবে বলেও তিনি জানান।

গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকেরা আজ যেসব পরামর্শ দিয়েছেন—

সেনা মোতায়েন না করার বিষয়ে অনেকেই একমত
না ভোট রাখার পক্ষে প্রায় সবাই একমত
নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়া
নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা
বড় ধরনের কোনো সংস্কার কার্যক্রম হাতে না নেওয়া

জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিকভাবে সরবরাহ করা
প্রার্থীর হলফনামা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, মিথ্যা তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেওয়া
ভোটে সব ধরনের অর্থের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা
নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা, লঙ্ঘিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া
নির্বাচনে কোনোভাবেই যেন ধর্মের ব্যবহার না হয়
যুদ্ধাপরাধীরা যেন নির্বাচন করতে না পারেন
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য কর্মশালার আয়োজন করা
দলনিরপেক্ষ কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব দেওয়া
প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা
নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর সারা বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা
নির্বাচনের ফল ঘোষণার সময় সমন্বয় করা, যাতে সবাই একই তথ্য সরবরাহ করে
পরাজিত প্রার্থী ও দলের ওপর জুলুম-নিপীড়ন যাতে না হয়
অনেক রাজনৈতিক দল ভোট বেশি পেয়ে সিট কম পায়, কেন হয় সেটি দেখা
এখন থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা
একদিনে ভোট গ্রহণ না করে একাধিক দিনে ভোট গ্রহণ করা
গণমাধ্যমকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে সহযোগিতা করা

আজ সংলাপে অংশ নেন বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, এনটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক খায়রুল আনোয়ার, এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ জ ই মামুন, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক শাইখ সিরাজ, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, বাংলা ভিশনের হেড অব নিউজ মোস্তফা ফিরোজ, সময় টিভির বার্তা প্রধান তুষার আবদুল্লাহ, ইনডিপেনডেন্ট টিভির নির্বাহী সম্পাদক খালেদ ‍মুহিউদ্দীন, মাছরাঙা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক রেজোয়ানুল হক, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, চ্যানেল ২৪-এর এডিটর ইনপুট তালাত মামুন, যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফাহিম আহমেদ, ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, মোহনা টিভির বার্তা সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান, এসএ টিভির বার্তা সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, দীপ্ত টিভির বার্তা সম্পাদক মাহমুদুল করিম, এশিয়ান টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক বিল্লাল হোসাইন, রেডিও টুডের বার্তা প্রধান সেলিম বাশার, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমির খসরু, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস এম হারুন-উর-রশীদ প্রমুখ।

ইসি গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংলাপ শুরু করে। গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন: