ড্রোন দিয়ে নজরদারি করবে ঢাকার পুলিশ

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে ঢাকার পুলিশও পিছিয়ে থাকছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে নজরদারির উপকরণ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন সংযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।

ওই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আজ বুধবার ডিএমপি সদর দপ্তরে দেশের চার উদ্ভাবকের তৈরি করা একটি ড্রোন পরীক্ষামূলকভাবে ওড়ানো হয়। সদর দপ্তরের সামনের বাগানে দূর নিয়ন্ত্রিত চার পাখাওয়ালা সরাসরি মাটি থেকে উড়তে ও নামতে সক্ষম ওই ড্রোনটির (কোয়াড কপ্টার) পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন দেখেন ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের চার যুবকের গড়ে তোলা কোম্পানি অ্যারো রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ এই ড্রোনটি বানিয়েছে। বুয়েট থেকে পাশ করা খায়রুজ্জামান বিপ্লব, শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া, আজিজুল ইসলাম এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাশ করা আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই কোম্পানির উদ্যোক্তা।

১০ মিনিটের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন দেখার পরে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য ডিএমপিতে অনেকগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ আমরা সংযুক্ত করেছি। কিছুদিন আগে মোবাইল কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার যুক্ত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আমরা ডিএমপিতে চারটি ড্রোন যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এই ধরনের কোয়াটো কপ্টার ডিএমপিতে প্রয়োজন রয়েছে।’

এদিকে ড্রোনের উদ্যোক্তারা জানান, ডিএমপিতে প্রদর্শিত যানটির নাম তাঁরা দিয়েছেন বাংলা ড্রোন। এতে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি শক্তির উত্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বর্তমান অবস্থায় বাংলা ড্রোন একটানা সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট আকাশে উড়তে পারে। এটির ওজন প্রায় দেড় কেজি। এটি আরো এক কেজি পরিমাণ ওজন বহন করতে পারে। তবে ডিএমপির চাহিদা অনুযায়ী আরো উন্নত বৈশিষ্ট্যের যান বানানো সম্ভব। আর ঘুড়ি-১ নামে আরেকটি কোয়াড কপ্টার নির্মাণাধীন আছে। এটি সর্বোচ্চ তিন কেজি ওজন বহন করতে পারবে।

এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এ দেশীয় উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করাও একটা অন্যতম লক্ষ্য।’ দেশীয় প্রযু্ক্তিতে তৈরি করা মোবাইল কমান্ড সেন্টারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি তৈরি করতে বিদেশের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ খরচ হয়েছে। আমরা নিচ থেকে দেখেছি, এবার উপর থেকে দেখতে চাই। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।’

উদ্যোক্তা শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে তাঁরা ড্রোন নিয়ে গবেষণা করছেন। গতকাল প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল ডিএমপি ড্রোনে কী ধরণের বৈশিষ্ট্য চায়, তা নির্ধারণ করা। যেমন: এই ড্রোনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ক্যামেরা বা অন্যান্য পর্যবেক্ষণযন্ত্র ধারণ ক্ষমতা, একনাগাড়ে চলার ক্ষমতা ইত্যাদি ডিএমপির চাহিদার ওপরে নির্ভর করবে। তিনি বলেন, ‘এমনিতে এই ধরণের কোয়াড কপ্টার কম্পিউটার থেকে বেতারের মাধ্যমে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর গতিপথও নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায়, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি এলাকা পর্যবেক্ষণ করে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে পারে।’

শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। ডিএমপি এই ড্রোন নিলে তাঁরাই হবে আমাদের প্রথম গ্রাহক।’

ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ড্রোনের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা চার উদ্যোক্তা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। তাঁরা গবেষণা করে জানালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

পুলিশ কর্মকর্তারা আরও জানান, এই উড়োযানে শক্তিশালী লেন্সসহ ক্যামেরা বহনক্ষমতা, সহজ নিয়ন্ত্রণ, একনাগাড়ে অনেকক্ষণ ওড়ার ক্ষমতাসহ বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা প্রকৌশলীদের জানানো হয়েছে।

অ্যারো রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশের আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা ডিএমপির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। বিষয়টি আমরা গবেষণা শুরু করেছি। পরে আর্থিক ব্যয় ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আবারও কথা বলব।’

এর আগে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে বর্ষবরণের নিরাপত্তা মহড়ায় প্রথমবারের মতো একটি বোমা অপসারণকারী রোবটের ব্যবহার করে ডিএমপি। সম্প্রতি যুক্ত হয় মোবাইল কন্ট্রোল।